পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা-বরিশাল নৌপথে আজ মঙ্গলবার (৩ জুন) থেকে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস শুরু হয়েছে। এবার যাত্রীদের চাপ সামলাতে রোটেশন প্রথা ভেঙে ১০ থেকে ১২টি লঞ্চ চলাচলের প্রস্তুতি নিয়েছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। প্রথম দিনে যাত্রীর উপস্থিতি অনুযায়ী এই সংখ্যা চার থেকে ছয়টি হতে পারে বলে জানা গেছে। নৌযান সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, ঈদের বিশেষ সার্ভিসে যাত্রী উপস্থিতি বাড়বে, তবে ঝড়-ঝঞ্ঝার মৌসুম হওয়ায় নৌযাত্রায় কিছুটা শঙ্কাও রয়েছে।
পদ্মা সেতু চালুর পর বরিশাল-ঢাকা নৌপথে লঞ্চ সার্ভিসে যাত্রী সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। ফলে লঞ্চ মালিকেরা রোটেশন পদ্ধতিতে মাত্র দুই থেকে তিনটি লঞ্চ পরিচালনা করছিলেন। তবে ঈদযাত্রায় বরাবরই যাত্রীর ভিড় আগের মতো ফিরে আসে। এবারও কোরবানির ঈদে লঞ্চ সার্ভিসে প্রচুর যাত্রী হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল সোমবার (২ জুন) বরিশাল নগরের বিভিন্ন লঞ্চের বুকিং কাউন্টার ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা থেকে বরিশালে আসার টিকিটের কিছুটা চাহিদা রয়েছে। অনেকেই আগেভাগে টিকিট সংগ্রহ করছেন, তবে আগের মতো তীব্র টিকিট সংকট দেখা যাচ্ছে না।
সুন্দরবন লঞ্চের মাস্টার মো. আলম এবং কুয়াকাটা লঞ্চের মাস্টার মো. মানিক জানান, দীর্ঘদিন ধরে লঞ্চে যাত্রী সংকট চলছে, তাই তারা কেবল ঈদযাত্রার দিকে তাকিয়ে থাকেন। রোটেশন প্রথা তুলে দেওয়ায় ঈদুল আজহায় সাধারণ মানুষের ভিড় বাড়বে বলে তারা আশা করছেন। তবে বর্তমান ঝড়ের মৌসুম হওয়ায় তারা কিছুটা শঙ্কার কথাও উল্লেখ করেন।
অভ্যন্তরীণ লঞ্চ মালিক সমিতির মহাসচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী জানান, ঈদের আগে রোটেশন প্রথায় দুটি লঞ্চ চলাচল করলেও ঈদ উপলক্ষে রোটেশন তুলে দিয়ে লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। গত রোববার লঞ্চ মালিক সমিতির সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৩ জুন (মঙ্গলবার) থেকে বিশেষ সার্ভিস শুরু হচ্ছে। ঈদে ভাড়া বাড়বে না। সরকারি নির্ধারিত রেট অনুযায়ী সিঙ্গেল ১০০০ টাকা, ডাবল ২০০০ টাকা এবং ডেকের ভাড়া ৪০০ টাকা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ঈদের তিন দিন আগে এবং তিন দিন পরে মালবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। গত ২২ মে মন্ত্রণালয়ের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক শহিদুল ইসলাম জানান, কোরবানির ঈদে যাত্রীসেবা নিশ্চিতে তারা প্রস্তুতি নিয়েছেন। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে সমন্বয় সভায় ঈদে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় আনসারের পাশাপাশি ক্যাডেট সদস্যরা ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করবেন। বর্তমান ঝড়-ঝঞ্ঝার মৌসুম হওয়ায় নৌনিরাপত্তা দিবসে লঞ্চ চালকদের সতর্ক করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
বরিশাল নৌযাত্রী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ নিলু বলেন, ঈদ উৎসবে যাত্রীদের যাতে স্বস্তির যাত্রা হয়, সেদিকে প্রশাসন ও লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে, ঝড়-ঝঞ্ঝার এই মৌসুমে সতর্কভাবে লঞ্চ চলাচল করতে হবে। তারা এই বিষয়গুলো সংগঠনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করবেন।