নিরাপত্তা নিয়ে শিবির সভাপতির প্রশ্ন—‘ক্যাম্পাস এখনো নিরাপদ নয়’

New-Project-1.jpg
২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় এলাকায় একযোগে ছয়টি অবিস্ফোরিত ককটেল সদৃশ বস্তু উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে ক্যাম্পাসজুড়ে। সোমবার (১৬ জুন) সকালে কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের সামনে কাঠবাদাম গাছের নিচে পড়ে থাকা সন্দেহজনক বস্তুগুলো প্রথম দেখতে পান বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীরা। পরে বিষয়টি প্রক্টর অফিস ও শাহবাগ থানা পুলিশকে জানানো হলে তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ককটেল সদৃশ বস্তুগুলো উদ্ধার করে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে বিষয়টিকে ‘উদ্বেগজনক’ আখ্যা দেওয়া হলেও, ছাত্ররাজনীতির নেতারা বিষয়টি নিয়ে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে দেয়া এক পোস্টে বলেন,

“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থান থেকে আজ অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার, এটি প্রমাণ করে যে ক্যাম্পাস এখনো নিরাপদ নয়। এই বয়ান প্রতিষ্ঠার চক্রান্ত আজও চলমান। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবিলম্বে আজকের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে হবে এবং বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “গণতান্ত্রিক ও নিরাপদ ক্যাম্পাস গঠনের একমাত্র সমাধান ডাকসু নির্বাচন। এটি বাস্তবায়নে প্রশাসনকে প্রতিটি সম্ভাব্য কনসার্ন বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ সক্ষমতা ও দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন থাকা সত্ত্বেও ডাকসু পেছানোর ষড়যন্ত্রকে থামাতে না পারলে ব্যর্থতার দায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে স্বসম্মানে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত।”

কীভাবে উদ্ধার হলো এই বিস্ফোরকদ্রব্য?

সোমবার সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের সামনে রুটিন টহলের সময় নিরাপত্তারক্ষীদের একজন কাঠবাদাম গাছের নিচে কালো রঙের একটি ব্যাগ দেখতে পান। ব্যাগের ভেতর থেকে সিসা ও তারযুক্ত বস্তু বেরিয়ে থাকতে দেখে সন্দেহ হয়, এবং তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমকে জানানো হয়। পরে পুলিশ এসে নিশ্চিত করে, এগুলো ককটেল সদৃশ বস্তু।

এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি (তদন্ত) সাংবাদিকদের জানান, “ককটেল সদৃশ বস্তুগুলো পর্যালোচনা করে নিরাপত্তা ও বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা মত দেবেন এগুলোর প্রকৃত ধরণ সম্পর্কে। প্রাথমিকভাবে এগুলো অবিস্ফোরিত আইইডি বা হাতবোমা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “এটি অত্যন্ত গুরুতর নিরাপত্তা ইস্যু। আমরা পুরো বিষয়টি তদন্ত করছি। আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”

হঠাৎ এমন একটি ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে ঘটনাটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনৈতিক সংকেত হিসেবে দেখছেন। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, “ক্যাম্পাসে যদি বোমা রাখা হয়, তবে আমরা কোথায় নিরাপদ? এটা শুধু আইনশৃঙ্খলার ব্যর্থতা না, আমাদের ভবিষ্যতের ওপরও আঘাত।”

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ডাকসু নির্বাচনের দাবি আরও জোরালো হয়েছে। তবে এবারের ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটলো, যখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে এবং বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ক্যাম্পাসে সক্রিয় হয়ে উঠছে।

 

Leave a Reply

scroll to top