গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে অভিনেতা সমু চৌধুরীর একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। ছবিতে দেখা যায়, গামছা পরে একটি মাজার চত্বরে গাছতলায় শুয়ে আছেন তিনি। মুহূর্তেই ছবিটি ঘিরে শুরু হয় জল্পনা—কেউ বলছে শারীরিক বা মানসিক সমস্যায় পড়েছেন, কেউবা সন্দেহ করছেন এটি কোনো নাটক বা সিনেমার দৃশ্য।
পরে জানা যায়, ঘটনাটি বাস্তব এবং ছবিটি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার মশাখালী ইউনিয়নের একটি মাজারে তোলা। ছবিটি ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয়রা বিষয়টি পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ গিয়ে সমু চৌধুরীকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়।
দিবাগত রাত তিনটার দিকে গফরগাঁও পৌঁছান অভিনেতার চাচাতো ভাই রাইসুল ইসলাম এবং অভিনয়শিল্পী সংঘের সদস্য সুজাত শিমুল ও জুলফিকার চঞ্চল। এরপর সবার উপস্থিতিতে পুলিশ সমু চৌধুরীকে পরিবারের জিম্মায় তুলে দেয়। আজ শুক্রবার সকালে তাঁকে নিয়ে যশোর সদরের নতুন বাজারের বাসায় পৌঁছান স্বজনরা। বর্তমানে তিনি সেখানে মায়ের কাছে বিশ্রামে রয়েছেন।
রাইসুল ইসলাম জানান, সমু চৌধুরী মাজারভক্ত। কাজ না থাকলে প্রায়ই মাজারে চলে যান। এবারের ঈদে যশোরে ছিলেন, মায়ের সঙ্গেই সময় কাটিয়েছেন। ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরলেও, পরদিন এক পরিচিতজনের সঙ্গে গফরগাঁওয়ের একটি মাজারে যান এক কাপড়ে। কাপড় ময়লা হওয়ায় ধুয়ে দিয়ে গামছা পরে গাছতলায় ঘুমাচ্ছিলেন। তখনই কোনো একজন সেই মুহূর্তের ছবি তুলে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়।
এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর সমু চৌধুরী কিছুটা মানসিক চাপে পড়লেও বর্তমানে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ আছেন বলে জানান রাইসুল। তিনি আরও বলেন, ‘ভাইয়া সবসময় সাদামাটা জীবনযাপন করেন। লুঙ্গি-গামছা পরে বাড়িতেও ঘোরাঘুরি করেন, রান্নাও করেন। কিন্তু কেউ না জেনে এমন ছবি ছড়িয়ে দেওয়াটা খুবই দুঃখজনক।’
উল্লেখ্য, সমু চৌধুরী একজন বর্ষীয়ান অভিনয়শিল্পী। ১৯৯০ সালে টিভি নাটকে যাত্রা শুরু করে ‘জন্মভূমি’, ‘সাতপৌরে কাব্য’, ‘জিনের বাদশা’, ‘এবং আমি’সহ বহু নাটকে অভিনয় করে তিনি পরিচিতি পান। পাশাপাশি অভিনয় করেছেন বেশ কিছু চলচ্চিত্রেও। ওটিটিতেও কাজ করেছেন সাম্প্রতিক সময়ে। অভিনয়জীবনের বাইরে তিনি ব্যক্তিজীবনে খুবই নিভৃতচারী, সাদামাটা একজন মানুষ।
তাঁর পরিবার জানায়, কেউ না জেনে বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট বানিয়ে তাঁকে নিয়ে অপ্রয়োজনীয় আলোচনা তৈরি করেছে, যা একজন শিল্পীর জন্য সম্মানহানিকর। তবে এখন সমু চৌধুরী পরিবার ও মায়ের সান্নিধ্যে ভালো আছেন—এটাই সবার জন্য সবচেয়ে বড় খবর।