শ্বশুরবাড়িতে হেনস্তার শিকার রাবি শিক্ষক, জোর করে দেনমোহর আদায়ের অভিযোগ

New-Project-30-1.jpg

ড. মাহবুবুর রহমান

২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান সম্প্রতি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন। স্থানীয়ভাবে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে তিনি শুধু পারিবারিক অপমানেরই নয়, বরং সামাজিকভাবে হেনস্তার শিকারও হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। তার ওপর দেওয়া হয়েছে মিথ্যা অভিযোগ, ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বিভ্রান্তিকর তথ্য।

ঘটনার সূত্রপাত

ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন ড. মাহবুব তার অসুস্থ স্ত্রীকে দেখতে রাজশাহীর ধানতৈর এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে যান। শ্বশুর পক্ষ তাকে জানায় স্ত্রী শারীরিকভাবে দুর্বল, কথা বলতে পারছেন না, এসে দেখে যেতে বলেন। কিন্তু গেটে পৌঁছেই তিনি শ্বশুরের তীব্র ভাষায় আপ্যায়নের বদলে অপমানিত হন। এর কিছু সময়ের মধ্যেই একাধিক স্থানীয় লোক জড়ো হয়ে তাকে ঘিরে ফেলেন। একপর্যায়ে সাংবাদিক ডেকে এনে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করা হয় এবং কিছু মনগড়া মন্তব্যসহ ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

ড. মাহবুবুর রহমানের বক্তব্য

ড. মাহবুব জানান, আমি আমার দুই বছর ধরে বিয়ে করা বউয়ের বাসায় গিয়েছিলাম, অসুস্থ স্ত্রীকে দেখতে। শশুর কম দেনমোহর ও আরো কিছু কারণে আমার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। আমি অল্প দেনমোহর দিয়েছি, যা আমার সামর্থ ছিল, বিয়ের সময়েই নগদে পরিশোধ করেছিলাম। উনি কাজী ডেকে দেনমোহর বেশি করার কথা বলেন, আমি কমিয়ে রাখতে বলি। বিয়েটাতে আমার কিছুটা ভুল ছিল, সেটা মিউচুয়ালি হয় আলোচনা অ্যক্সেপ্টেট হওয়ার পরে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছিল প্রায় সাত/আট মাস আগে। পরে এটা উনি অস্বীকার করেন।

এসময় কেউ সাংবাদিককে কল দেয়। আমি যাওয়ার পরে দেখতে পাই আমার স্ত্রীকে আটকে রাখা হয়েছে, উনারা বিভিন্ন মিথ্যা ও মনগড়া কথা বলছিলেন আমার নামে। এরপর সেগুলো যাচাই করার জন্য আমার ওয়াইফকে সামনে হাজির করার কথা বললে উনি রাজি হননি। বা কেউ গিয়ে তার কাছে কথাগুলোর সত্য মিথ্যা যাচাই করে আসবে, এমন কথাতেও খুব জোরে না করেছেন। ভিডিওটায়, আমি অনেক প্রশ্নের উত্তর দেইনি অনেক মানুষ ওখানে ঝামেলা করছিল বলে। তাছাড়া, এত মানুষের মধ্যে একা ছিলাম বলে নার্ভাস ছিলাম। সেটা ভিডিও দেখে বোঝা যায় সহজে।

তিনি আরও জানান, তার স্ত্রীকে সামনে হাজির করে সত্য যাচাইয়ের সুযোগও দেওয়া হয়নি। উপরন্তু, দুই-তিনজন নারী দিয়ে স্ত্রীর পাহারা বসানো হয় যাতে সে বাইরে এসে কিছু বলতে না পারে। তার অভিযোগ, উদ্দেশ্য ছিল তাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা।

এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

ঘটনার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ও সহকর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে অধ্যাপকের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, “একজন শিক্ষকের সঙ্গে এমন আচরণ শুধু ব্যক্তিগত অপমান নয়, গোটা শিক্ষাব্যবস্থার মর্যাদার ওপর আঘাত।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবিলম্বে ঘটনার তদন্ত করে দায়ীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এই ঘটনার মাধ্যমে পারিবারিক ও সামাজিক নিপীড়নের একটি ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে—যা শুধু ব্যক্তির নয়, সমাজেরও বিবেককে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

Leave a Reply

scroll to top