ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন অবকাশ উপলক্ষে টানা ১৭ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। তবে এই দীর্ঘ ছুটির মধ্যে আবাসিক হলগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র অসন্তোষ। অন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের সময় হলে থাকার সুযোগ রাখা হলেও রাবি প্রশাসন এ বিষয়ে অনড় অবস্থান নিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার (২৯ মে) থেকে রোববার (১৫ জুন) পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি থাকবে। এর মধ্যে আগামী ৫ জুন (বুধবার) থেকে ১৩ জুন (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত ৯ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি আবাসিক হল বন্ধ থাকবে।
এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া তীব্র হয়ে উঠেছে। রাবির বিভিন্ন গ্রুপে করা এক জরিপে দেখা যায়, ৭৭৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থী হল বন্ধের বিরোধিতা করেছেন।
“প্রশাসন আমাদের কণ্ঠ শুনতে চায় না”
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, “গত ঈদেও আমরা হল খোলা রাখার দাবিতে আন্দোলন করেছিলাম। যারা হলে থাকবে এমন শিক্ষার্থীদের তালিকা দিয়েছি, যুক্তি দিয়েছি, তবুও প্রশাসন কর্ণপাত করেনি। এই অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণ ফ্যাসিবাদের শামিল।”
তিনি আরও বলেন, “প্রশাসনের একমাত্র এজেন্ডা এখন নিয়োগ—শিক্ষার্থীদের চাহিদা, জীবনযুদ্ধ কিংবা মানবিক দিক তাদের মাথায় নেই। এই যে কণ্ঠরোধের সংস্কৃতি, একে ফ্যাসিস্ট বললে তো কাল আবার আমাদের নামে তদন্ত কমিটি হবে!”
“ঈদ শুধু মুসলিমদের নয়—হল খোলা রাখা জরুরি”
রাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, “ঈদুল ফিতরের আগেও হল বন্ধ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এমনকি শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ করায় তখন প্রক্টর ও রেজিস্ট্রার মহোদয়ের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কির মতো অপ্রীতিকর পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছিল।”
তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, “শুধু মুসলিমরা নয়, অন্যান্য ধর্মের শিক্ষার্থীরাও এই সময়ে হলে অবস্থান করতে চায়। কেউ হয়তো চাকরির প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, কেউ পারিবারিক কারণে বাড়ি ফিরতে পারছে না। তাই প্রশাসনের উচিত মানবিক দৃষ্টিতে বিষয়টি দেখা।”
“একাকী ঈদের কষ্ট কেউ বোঝে না”
শিবির শাখার সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, “জীবনের কঠিন সময়ে একাকী ঈদ করাটা কোনো শিক্ষার্থীর জন্য সহজ না। তখন তাকে মাথা গোঁজার আশ্রয়টুকু থেকে বঞ্চিত করা শুধু অমানবিক নয়, এটি একটি মৌলিক শিক্ষার্থী অধিকার লঙ্ঘন।”
তিনি বলেন, “যারা পরিবার থেকে দূরে, জীবনের চাপে একা থাকতে বাধ্য হয়, তাদের পাশে থাকা উচিত ছিল হল প্রশাসনের। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে উল্টো তারা তাদের ঠাঁইটুকু কেড়ে নিচ্ছে। এটা হৃদয়হীন সিদ্ধান্ত।”
প্রশাসনের অবস্থান: “যারা থাকতে চায়, তাদের জন্য ব্যবস্থা থাকবে”
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, “প্রভোস্ট কাউন্সিলের সুপারিশ অনুযায়ী হল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে যদি কিছু শিক্ষার্থী একান্তভাবে হলে থাকতে চান, তাহলে তাদের জন্য আলাদা করে ব্যবস্থা থাকবে। এই নির্দেশনা সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
ছুটি নিয়ে প্রশাসনের সিদ্ধান্তে যেখানে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বিরক্ত ও হতাশ, সেখানে আশার আলো একটাই—বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে এই পরিস্থিতি সহজেই মানবিকভাবে সমাধান করতে পারে। শিক্ষার্থীরা যেন ঈদের দিনগুলোতে একাকীত্ব বা অনিশ্চয়তার মধ্যে না কাটায়, সেই সচেতনতা এবং দায়িত্ববোধ দেখানো এখন সময়ের দাবি।