জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে

 “নির্বাচন চাই না এক ব্যক্তি”: মির্জা আব্বাস

New-Project-29-4.jpg
২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ ৩০ মে, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী। যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালন করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দলটির শীর্ষ নেতারা। এ সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “ডিসেম্বরে নির্বাচন চান না, এমন একমাত্র একজন ব্যক্তি—তিনি হচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।”

সম্প্রতি জাপানে অনুষ্ঠিত ৩০তম নিক্কেই ফোরামের আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের দেওয়া বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে মির্জা আব্বাস বলেন, “আমরা খুব দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, জাপানে বসে বিএনপিকে হেয় করে কথা বলছেন ড. ইউনূস। তিনি বলছেন একটি দল নির্বাচন চায়। কিন্তু আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, একটা লোকই নির্বাচন চায় না—এবং তিনি নিজেই সেই লোক।”

“ডিসেম্বরে না হলে নির্বাচন হবে না”—আব্বাস

বিএনপি নেতা বলেন, “ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে—এটা তো ইউনূস সাহেব নিজেই প্রথম বলেছেন। আমরা তো বলিনি। এখন তিনি জুনের কথা বলছেন। আমরা বলছি, এই নির্বাচন যদি হয়, তবে ডিসেম্বরেই হবে—জুনে নয়। না হলে এ দেশে কোনো নির্বাচনই হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন না করার দায় আমাদের নয়, ইউনূস সাহেবের। আমরা জাতি ও জনগণ মিলে এই নির্বাচন আদায় করবো। তা না হলে দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে।”

বর্তমান সময়ের রাজনীতি নিয়ে কটাক্ষ করে মির্জা আব্বাস বলেন, “এখন সংস্কার সংস্কার করতে গিয়ে বিদেশ থেকে পরামর্শক আনছে সরকার। অথচ শহীদ জিয়াউর রহমান এমন বহু সংস্কার করেছেন, কখনো বিদেশ থেকে কাউকে আনেননি। বরং দেশি চিন্তা-ভাবনা আর মাটি ও মানুষের বাস্তবতা থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”

তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার এখন এমন জায়গায় চলে গেছে, যেখানে তারা নির্বাচন দিতে চায় না। জিয়াউর রহমান ছিলেন জনগণের নেতা, আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি। তিনি ছিলেন শৃঙ্খলার প্রতীক, গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তক এবং জাতীয়তাবাদের প্রবর্তক।”

সকাল সাড়ে ১০টায় বিএনপির শীর্ষ নেতারা শেরেবাংলা নগরের সমাধিস্থলে উপস্থিত হন। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি তাঁরা নীরবতা পালন ও মোনাজাতে অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আমানউল্লাহ আমান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, লুৎফুজ্জামান বাবর, খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আমিনুল হক, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজসহ ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি আট দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল, গরীব-দুঃস্থদের মাঝে খাদ্য ও বস্ত্র বিতরণ। আজকের এই দিনে, যখন দলটি আবার রাজনৈতিক ময়দানে পুনরুদ্ধারের পথে, তখন বিএনপির নেতারা জিয়ার আদর্শকে সামনে রেখে একত্রিত হচ্ছেন—এ এক রাজনৈতিক বার্তা বটে।

বক্তব্যের এক পর্যায়ে মির্জা আব্বাস বলেন, “এক ব্যক্তির ইচ্ছায় যদি নির্বাচন পেছানো হয়, তাহলে তা দেশের জন্য হবে ভয়াবহ বার্তা। জনগণ কখনো তা মেনে নেবে না। আমরা নির্বাচন চাই, কিন্তু সেটি ডিসেম্বরের মধ্যে চাই। এক ব্যক্তির চাওয়া না মানলেই দেশ রক্ষা পাবে।”

এদিন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকেও শহীদ জিয়ার আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়।

জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালের এই দিনে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এক অভ্যুত্থানচেষ্টার সময় নিহত হন। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায় সূচিত হয়েছিল, যা আজও তর্ক ও বিতর্কের কেন্দ্রে রয়ে গেছে।

 

Leave a Reply

scroll to top