ইরান-ইসরায়েল সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক উত্তেজনার নতুন মাত্রা তৈরি করেছে, যা গোটা বিশ্বকে টানছে অনিশ্চয়তা ও বিপর্যয়ের দিকে।

পারমাণবিক আগুনে ঘি ঢালছে মধ্যপ্রাচ্য

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক উত্তেজনা চরমে। যুদ্ধের আশঙ্কায় কাঁপছে বিশ্ব, দরকার সংযম ও কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ।
মুহাম্মদ নূরে আলম

১৪ জুন ২০২৫—এই দিনটি মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে এক নতুন যুদ্ধ ও আতঙ্কের অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকলো। ইসরায়েলের সরাসরি ও বিস্তৃত হামলা ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিল—এই সংঘাত আর ছায়াযুদ্ধে সীমাবদ্ধ নেই।

বিশ্ব এখন এমন এক মোড়ের সামনে দাঁড়িয়েছে, যেখানে শুধু মধ্যপ্রাচ্যের নয়—বিশ্ব রাজনীতি, জ্বালানি নিরাপত্তা এবং পারমাণবিক অপ্রসারণ নীতিই হুমকির মুখে পড়েছে। প্রশ্ন উঠছে—এই সংঘাত কি সীমিত থাকবে, নাকি তা আরও বিস্তৃত হবে?

হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা হোসেইন সালামি, চিফ অব স্টাফ মোহাম্মদ বাঘেরি, পরমাণু বিজ্ঞানী ফেরেদুন আব্বাসি এবং মোহাম্মদ তেহরানচি। এটি শুধু একটি সামরিক আঘাত ছিল না, বরং একে বৈজ্ঞানিক ও কৌশলগত যুদ্ধেও পরিণত করেছে।

জাতিসংঘের ১৯৬৮ সালের NPT অনুযায়ী, এই হামলা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। নাতানজ ও ফোর্দো প্লান্টে আঘাত ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলেছে।

নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, ইরান ৯টি পারমাণবিক বোমা তৈরির মতো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে। তবে IAEA এই দাবি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। অতীতে অপারেশন অপেরা (১৯৮১) ও অপারেশন অর্কার্ড (২০০৭)-এর মতো নজির থাকলেও, এবারের পরিণতি আরও ভয়াবহ।

NIS জানায়, ইউরেনিয়াম সাইটে হামলা তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে দিতে পারে, যা আফগানিস্তান, পাকিস্তানসহ উপসাগরীয় দেশগুলোর জনস্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

সৌদি আরব, ইউএই, কাতার ও তুরস্ক ইতোমধ্যেই শঙ্কিত। যুদ্ধ সরাসরি তাদের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও কাতার বা ওমানের মতো দেশ এবং জাতিসংঘ মধ্যস্থতার চেষ্টা চালাতে পারে, ইতিহাস বলছে—ইরান ও ইসরায়েল এতে খুব একটা সাড়া দেয় না।

চীন, রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। হরমুজ প্রণালীতে যেকোনো উত্তেজনা বিশ্ব তেল সরবরাহে প্রভাব ফেলতে পারে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য মারাত্মক।

এই সংঘাত নিছক একটি অঞ্চলিক দ্বন্দ্ব নয়, বরং তা বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও পরিবেশের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। শুধুমাত্র কূটনীতি, সংযম এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতাই পারে আগুন নেভাতে।

মুহাম্মদ নূরে আলম

মুহাম্মদ নূরে আলম

মুহাম্মদ নূরে আলম (Muhammad Noora Alam) একজন অভিজ্ঞ সাংবাদিক ও কনটেন্ট বিশেষজ্ঞ, যিনি পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রিন্ট, অনলাইন এবং ডিজিটাল মিডিয়ায় কাজ করে যাচ্ছেন।

Leave a Reply

scroll to top