নির্বাচনে কোনো দেশের হস্তক্ষেপ কাম্য নয়: ডা. শফিকুর রহমান

New-Project-2025-06-08T194625.770.png

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক

শহীদদের রক্তের মর্যাদা রক্ষা করে দেশে একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করেন বলে জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, নির্বাচনে কোনো দেশের হস্তক্ষেপ কাম্য নয়, এবং তার দলও অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চায় না। বরং তারা সবাইকে বন্ধু হিসেবে দেখতে আগ্রহী। আজ রোববার (৮ জুন) দুপুর ১২টায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভার মিলনায়তনে পেশাজীবী প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান তার বক্তৃতায় একটি প্রশ্নবিদ্ধহীন নির্বাচনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, “খুব ভালো নির্বাচন আমরা আশা করি। কেউ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করবেন না। তাহলে আমাদের শহীদদের প্রতি আমরা ইমানদারি রক্ষা করতে পারবো না। আমাদের শহীদের রক্তের অমর্যাদা হয় এমন কোনো নির্বাচন আমরা দেখতে চাই না।”

নিজেকে নিয়ে যুদ্ধাপরাধের মামলার চেষ্টার প্রসঙ্গ টেনে জামায়াত আমির বলেন, “অতীতে যে যা করেছে তার কিছু পাওনা তারা পেয়েছে, আরও পাবে, বাকিটা আখিরাতেও পাবে। আমরা একটা প্রতিহিংসামুক্ত সমাজ দেখতে চাই।” তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও সেই সময় তার বয়স এমন ছিল না এবং তিনি কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তিনি দাবি করেন, কুলাউড়ার কোনো মানুষই তার সম্পর্কে খারাপ কথা বলেনি এবং এই ঋণের জন্য তিনি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবেন।

তিনি আরও বলেন, “আমার প্রতি যদি এরকম আচরণ করা হয় তাহলে রাষ্ট্রের নাগরিকদের সঙ্গে কী করা হয়েছে তা এখান থেকেই বোঝা যায়। আমরা এটার কোনো প্রতিশোধ নেব না। কে বা কারা করেছে আমরা সব জানি। প্রতিহিংসা আর প্রতিশোধ যদি নিতেই থাকি, তাহলে এর কোনো শেষ নাই। এই সমাজ একটা অসুরের সমাজে পরিণত হবে। একটা মানবিক সমাজ আর বানাতে পারবো না। তবে যারা অপরাধ করেছে তাদের ন্যায়বিচার হোক, এই দাবি আমাদের বলিষ্ঠ। এখানে আমরা কোনো ছাড় দেবো না।”

ডা. শফিকুর রহমান দেশের মানবসম্পদ এবং আল্লাহর দেওয়া সম্পদই বাংলাদেশকে পরিবর্তনের জন্য যথেষ্ট বলে মন্তব্য করেন। তিনি কুশিক্ষার জায়গায় সুশিক্ষা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান। তার মতে, “যদি শিক্ষার কারিকুলাম ও মডিউল নৈতিকতার ভিত্তিতে হয়, তাহলেই শিক্ষার পরিপূর্ণ পূর্ণতা পাবে।”

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন যে, আকাশ সংস্কৃতির কারণে পরিবারের কাঠামো এলোমেলো হয়ে গেছে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুধু কীভাবে নিজে বড়লোক হওয়া যায়, সেটাই শেখানো হয়।

দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় ব্যয় হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যারা উচ্চশিক্ষায় পড়ালেখা করেছি, জাতির টাকা আমাদের পেটে ঢুকেছে, মগজে ঢুকেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ইট, বালি, পাথরের সঙ্গে এ দেশের ১৮ কোটি মানুষ জড়িত।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এই শিক্ষাটাই যদি মানুষকে দেওয়া হতো যে, তোমাদের বেড়ে ওঠার পেছনে সমস্ত মানুষের অবদান। তাদের দান-অনুদানে তুমি আজ এই জায়গায় এসেছো। যত বড় মেধাবী যতবড় শিক্ষিত ততবেশি তারা জাতির কাছে দায়বদ্ধ। এটাই যদি তাদের মগজে প্রতিষ্ঠা করা যেতো, তাহলে ঘুষ নেওয়ার সময় তাদের হাত থরথর করে কাঁপতো। এই নৈতিক দায়বদ্ধতা যদি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় যুক্ত করতে পারি তাহলে আমাদের শিক্ষিত সমাজ জাতির সম্পদে পরিণত হবে।”

সভায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সিলেট মহানগর আমির ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মো. ফখরুল ইসলাম, জেলা নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রহমান, জেলা সেক্রেটারি মো. ইয়ামির আলী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জেলার সভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস ও ঢাকা পল্টন থানা আমির শাহীন আহমদ খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

scroll to top