জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ অধিভুক্ত অ্যাসোসিয়েশন ও ফেডারেশনের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। সোমবার (১৭ জুন) এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঘুড়ি, প্যারা আরচ্যারি ও খিউকুশিন কারাতে—এই তিনটি অ্যাসোসিয়েশনকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন, ২০১৮-এর ক্ষমতাবলে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অধীন ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়নের সংখ্যা ছিল ৫৫টি। তিনটি অ্যাসোসিয়ন বিলুপ্ত হওয়ার পর বর্তমানে ফেডারেশন-অ্যাসোসিয়েশনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২টিতে। ক্রীড়াঙ্গনের অনেকে এই পদক্ষেপকে ২০১৮ সালের পরবর্তী সময়ে প্রথম বড় ধরনের কাঠামোগত সংস্কার হিসেবে দেখছেন।
বিলুপ্ত হওয়া অ্যাসোসিয়নগুলো পুরোপুরি বাতিল করা হয়নি। তাদের কার্যক্রমকে সমজাতীয় অন্য ফেডারেশনের সঙ্গে একীভূত করা হয়েছে। যেমন, প্যারা আরচ্যারিকে যুক্ত করা হয়েছে বাংলাদেশ আরচ্যারি ফেডারেশনের সঙ্গে, খিউকুশিন কারাতেকে বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের আওতায় আনা হয়েছে এবং ঘুড়ি অ্যাসোসিয়েশনকে সংযুক্ত করা হয়েছে বাংলাদেশ কান্ট্রি গেমস অ্যাসোসিয়েশনে।
ঘুড়ি অ্যাসোসিয়েশন বেশ পুরনো হলেও সাম্প্রতিক সময়ে কার্যক্রম ছিল প্রায় অদৃশ্য। যদিও বিভিন্ন ঘুড়ি উৎসবে অংশগ্রহণ করত সংগঠনটি, তবে এর প্রশাসনিক ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গত কয়েক বছর ধরে তেমন চোখে পড়েনি। তাই এটিকে বিলুপ্তির সিদ্ধান্তকে অনেকেই যৌক্তিক মনে করছেন।
অন্যদিকে প্যারা আরচ্যারি ও খিউকুশিন কারাতের যাত্রা ছিল খুব সাম্প্রতিক। তবে বিশেষ রাজনৈতিক প্রভাব ও ব্যক্তিগত তদবিরে এই অ্যাসোসিয়েশনগুলোর জন্ম হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির প্রত্যক্ষ প্রভাবে খিউকুশিন কারাতে অ্যাসোসিয়েশন অনুমোদন পেয়েছিল বলে জানা যায়।
এই বিলুপ্তি ও একীভূতির মধ্য দিয়ে আবারও আলোচনায় এসেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ফেডারেশন-অ্যাসোসিয়েশন অনুমোদনের প্রক্রিয়া। অনেক অপ্রচলিত খেলা যেমন জুজুৎসু, থ্রোবল, বাশাআপ, মাউন্টেরিং, সেপাক টেকরো, চুকবলের মতো খেলাও পেয়েছে অ্যাসোসিয়েশনের স্বীকৃতি। এমনকি তায়কোয়ান্দো, কারাতে, মার্শাল আর্টের মতো প্রায় একই ধরনের খেলাতেও রয়েছে পৃথক ফেডারেশন।
বর্তমানে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ফুটবল ও ক্রিকেট বাদে অধিকাংশ ফেডারেশন-অ্যাসোসিয়নে অ্যাডহক কমিটি গঠন করছে। ইতোমধ্যে ৪৭টি কমিটি গঠন হয়েছে। তবে মহিলা ক্রীড়া সংস্থা, শুটিং ফেডারেশনসহ আরও দুটি সংস্থার কমিটি এখনো ঘোষণা হয়নি। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্য পাওয়া শুটিংয়ের স্থবিরতা ক্রীড়ামহলে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
তিনটি অ্যাসোসিয়েশন একীভূত হওয়ার ফলে সংশ্লিষ্ট ফেডারেশনগুলোর দায়িত্ব ও কর্মপরিধি বেড়েছে। তবে তাদের আর্থিক বরাদ্দ, অবকাঠামোগত সুবিধা ও মানবসম্পদ কতটা বাড়বে, সে বিষয়ে এখনো কোনো স্পষ্ট দিকনির্দেশনা মেলেনি।