প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ব্যবসাবান্ধব নয়: ডিসিসিআই

প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ব্যবসাবান্ধব নয়: ডিসিসিআই

ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ

মুহাম্মদ নূরে আলম

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের ওপর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, এই বাজেট ব্যাবসা বান্ধব নয়। বাজেটে ব্যাবসায়ীক পরিবেশ সৃষ্টি, নূন্যনত কর আয়সীমা ব্যাক্তি থেকে কোম্পানি ও মূল্যস্ফ্রীতি রোধে ব্যাপক অসান্যযোস্য রয়েছে। এর ফলে বিগত দিনের মতো ব্যাংক নির্ভর হতে হবে সরকারকে। আমরা আশাব্যাঞ্জক হতে পারিনি। সংগঠনটি বলেছে, প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষমাত্রা বৃদ্ধি ও অর্থায়ন প্রভৃতি বিষয়গুলো অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। কারন রাজনৈতিক অস্থিরতা , ভারতের সাথে নন ট্রাফিক রেরিয়ার এবং আইএমএফ এর শর্তসাপেক্ষে কর অব্যহতিসহ কিছু চ্যেলেঞ্জ বাজেটে প্রভাব ফেলবে। সোমবার (২রা জুন) টেলিভিষনে ভাষনের মাধ্যমে অর্থ উপদেষ্টা জাতীয় বাজেট উপস্থাপনের পর গণমাধ্যমে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এর সভঅপতি তাসকিন আহমেদ সাংবাদ সন্মেলনে এমন আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।

প্রাক্কলিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে কর কাঠামোর অটোমেশন কে স্বাগত জানিয়ে ডিসিসিআই বলে, যৌক্তিক রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও সরকারি ব্যয়ে সামঞ্জ্যসতা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও বাজেটে আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আয়-ব্যয়ের ঘাটতি স্থানীয় ব্যাংকিং ও অন্যান্য বৈদেশিক খাত হতে অর্থ সংস্থানের নির্ভরতা আরো বাড়লে দেশ উচ্চমূলে সুুদের খরচ বাড়বে সরকারের । ঢাকা চেম্বার মনে করে, বাজেটের কত বড় সেই বিষয়ে না গিয়ে পরিকল্পিত ব্যাবসা সৃষ্টি, সময়োপযোগী একটি স্থিতিশীল ও অন্তভূক্তিমূলক অর্থনীতি গঠনে, কর্ম দক্ষতা অর্জন এবং বাস্তবায়ন-যোগ্য বাজেট প্রণয়ন একান্ত অপরিহার্য।

ঢাকা চেম্বার বলেন, করর্পোরেট কর হ্রাসের ক্ষেত্রে না হেটে সরকার আরো বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানিক উভয় ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে ব্যাক্তি করদাতার গ্রস প্রাপ্তির উপর ০.২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে কর স্লাবে পরিবর্তন মধ্যবিত্ত ও চাকুরিজীবিদের উপর করের বোঝা আরো বাড়বে। কর্পোরেট করের ক্ষেত্রে টার্নওভার কর ০.৬ শতাংশ থেকে ১ শত্ংাশ করা ঠিক হয়নি বলে মনে করে ঢাকা চেম্বার। ব্যক্তি শ্রেণির ও ব্যাবসায়ী শ্রেনীর কর সীমা বৃদ্ধি না করে তার আওতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। মূল্য সংযোজন কর এর ফলে বিশেষ করে প্রকিৃয়াজাত খাদ্যপন্য উৎপাদনে ১৫ শতাংশ ভ্যাট স্থানী শিল্প আর টিকবে না ধারনা করা হচ্ছে। স্থানীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশের উপর গুরোত্ব দেয়া হয়নি অন্যান্য দেশের মতো করে, বাংলাদেশের সমতুল্য দেশের তুলানায়। বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য পর্যায়ক্রমে বিদ্যমান করপোরেট কর হ্রাস করা প্রয়োজন বলে মনে করে ঢাকা চেম্বার।

প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানি ও রপ্তানি শিল্পেশুল্ক্ ও কর কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। সেখানে আমদানি শুল্কে নতুন ৩ শতাংশ স্তর যুক্ত হওয়া এবং সম্পূরক শুল্কে ৪০ শতাংশ যোগ করাকে স্থানীয় ব্যাবসাকে ইতিবাচক বলে স্বাগত জানায় ডিসিসিআই। তবে দেশিয় টেষ্কটাইল মিলে উৎপাদিত পন্যের ও মেনমেইড সুতার উপর সুনিদিষ্ট কর ৩ টাকা থেকে ৫ টাকায় বৃদ্ধি এবং সেন্ট্রাল বন্ডেড ওয়্যারহাউজ ও ফ্রি জোন বন্ডেড ওয়্যারহাউজ ব্যাবস্থা তৈরি পোশাক খাতের বেকওয়াড লিকেজ খরচ বাড়াবে । এজন্য বন্ড ব্যাবস্থা কে সহজীকরন করা প্রয়োজন। তবে আমদানি পন্যেও শুল্ক কর প্রত্যাহার ও হ্রাস কে স্বাগত জানায় ঢাকা চেম্বার অব কমার্স। এর ফলে করের ভার কিছুটা লাগব হবে এবং পন্য রপ্তােিত এন্টি এক্সপোর্ট বিয়াস হ্রাস হবে।

এদিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে বাজেট কমানো, এল এন জি এর আমাদানি পর্যায়ে উৎস কর কমানো এবং ভ্যাট প্রত্যাহার ২ শতাংশ থেকে মাত্র ০.৬ শতাংশ করা বিদ্যুৎ ও পরিবহন খাতে ব্যায় কমালেও তা দীর্ঘ মেয়াদি কোনো সমাধান নয় বলে মনে করে ডিসিসিআই। শিক্ষা খাতে ব্যায় বাড়ানো ইতিবাচক হবে তখনই, যদি আমরা কর্মমূখী শিক্ষা বিস্তার ও গভেষনা, উন্নয়নে বেশি ব্যায় করেতে পারি। তবে কৃষিতে নতুন উদ্যোক্তা ও প্রশিক্ষনের কথা বলা থাকলেও কৃষি উৎপাদনে করমুক্ত আয়ের সীমা বৃদ্ধি করা ইতিবাচক । আইএমএফ এর শর্ত মেনে সিএমএসএমই এর জন্য কোনো রেডম্যাপ না থাকার ফলে একটি নেতিবাচক প্রভাব পরবে কৃষি খাতে।

উল্লেখ্য, এডিবির আকার ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা হলেও ২০২৫ এর এপ্রিল প্রর্যন্ত মাত্র ৪১ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। কোভিড এর পরে সর্বনিন্ম পর্যায়ে পৌছেছে এডিবি বাস্তবায়ন,সেজন্য এসব কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স ইন্ড্রাস্টিজ এর পরামর্শ হলো পরিচালনা ব্যায় কমিয়ে বার্ষিক উন্নয়ন ব্যায় বরাদ্ধ বাড়ানো।

ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান সহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

মুহাম্মদ নূরে আলম

মুহাম্মদ নূরে আলম

মুহাম্মদ নূরে আলম (Muhammad Noora Alam) একজন অভিজ্ঞ সাংবাদিক ও কনটেন্ট বিশেষজ্ঞ, যিনি পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রিন্ট, অনলাইন এবং ডিজিটাল মিডিয়ায় কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি ঢাকা পোস্ট, নয়াদিগন্ত, বিজনেস মিরর এবং শিরোনাম মিডিয়ার মতো প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমে সাব-এডিটর ও কনটেন্ট ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি এনভিডিয়া ও দুবাই ওয়ান মিলিয়ন প্রমপ্টার্স থেকে জেনারেটিভ এআই ও প্রমপ্ট ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সনদপ্রাপ্ত। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে পাঠকবান্ধব, প্রাসঙ্গিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে প্রভাব ফেলতে সক্ষম কনটেন্ট তৈরিতে তার দক্ষতা অনন্য। ব্যবসা, প্রযুক্তি, সমাজ ও সমসাময়িক বিষয়ের উপর লেখালেখিতে তার পারদর্শিতা রয়েছে। পাশাপাশি তিনি ‘স্বপ্নবাজ ফাউন্ডেশন’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং ‘রেঁনেসা ফাউন্ডেশন’-এর মিডিয়া প্রধান হিসেবে কাজ করছেন।

Leave a Reply

scroll to top