জুলাই অভ্যুত্থানের পর এক পরিবর্তিত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে আগামী ২ জুন (সোমবার) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সংসদ কার্যকর না থাকায় এবার বাজেট উপস্থাপনার চিরাচরিত রীতিতে পরিবর্তন এসেছে। এই ঐতিহাসিক বাজেট বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), বাংলাদেশ বেতার এবং অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে সম্প্রচার করা হবে।
তথ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বাজেট বক্তৃতাটি ২৯ মে (বৃহস্পতিবার) বিকাল ৪টায় ধারণ করা হয়েছে এবং এটি বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারে বিশেষ ব্যবস্থায় প্রচারিত হবে। দেশের সব বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং রেডিও স্টেশনগুলোকেও বিটিভি থেকে ফিড গ্রহণ করে এই গুরুত্বপূর্ণ বাজেট বক্তৃতাটি একই সময়ে সম্প্রচার করার অনুরোধ জানানো হয়েছে, যাতে দেশের আপামর জনতা এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে বাজেটের বিস্তারিত জানতে পারে।
সংসদের বাইরে বাজেট উপস্থাপনার ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয়বার ঘটল। এর আগে, ২০০৮ সালে সেনা-নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সেবার ৯ জুন, সোমবার, তৎকালীন অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম ২০০৮-০৯ অর্থবছরের জন্য ৯৯,৯৬২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন, যা বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারে বেলা ৩টায় সম্প্রচারিত হয়েছিল।
এবার জুলাই অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই বাজেট উপস্থাপন করছে, যা দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি নতুন মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের সম্ভাব্য আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। উন্নয়ন বাজেটেও কাটছাঁট করা হয়েছে; এটি ৩৫ হাজার কোটি টাকা হ্রাস করে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ স্পষ্ট জানিয়েছেন, এবারের বাজেটে ব্যাংক থেকে বড় ঋণ নেওয়া বা টাকা ছাপানোর মাধ্যমে অর্থায়ন করা হবে না। তিনি বলেন, “আমরা বাস্তবসম্মত বাজেট প্রণয়ন করব। বড় মেগা প্রকল্পের জন্য ঋণ নিয়ে ঘাটতি বাড়ানোর পথে যাব না। কিছুটা ঘাটতি থাকবে, তবে তা আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রকল্পভিত্তিক অর্থায়নের মাধ্যমে পূরণ করা হবে।”
পরিকল্পনা উপদেষ্টা আরও জানিয়েছেন, এবারের বাজেট হবে বাস্তবসম্মত ও শৃঙ্খলাপূর্ণ। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, দুর্নীতি প্রতিরোধ, এবং জনকল্যাণমুখী উন্নয়নের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হবে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই বাজেট একটি নতুন দিকনির্দেশনা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দেশ ও অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের সাক্ষী হতে, আগামী ২ জুন (সোমবার) বিটিভি ও অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রচারিতব্য বাজেট অধিবেশনে চোখ রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।