মেক্সিকোয় সরাসরি ভোটে বিচারপতি নির্বাচনের যুগান্তকারী পদক্ষেপ

New-Project-21.jpg
২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

মেক্সিকো সরকার বিচারব্যবস্থাকে গণতান্ত্রিক ও দুর্নীতিমুক্ত করতে ইতিহাসে নজিরবিহীন এক পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জনগণের সরাসরি ভোটে বিচারপতি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে বিচার বিভাগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য থাকলেও, এটি ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক ও উদ্বেগ।

সংবাদমাধ্যম এএফপি জানিয়েছে, এমন এক সময়ে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যখন বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে মাদকচক্রসহ বিভিন্ন অপরাধী ও প্রভাবশালী গোষ্ঠী। তবুও সরকারের ভাষ্য, এই সংস্কারের মাধ্যমে বিচারব্যবস্থাকে আরও গণতান্ত্রিক ও দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা চলছে।

সরকারের দাবি, মেক্সিকো এখন বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে সুপ্রিম কোর্ট থেকে শুরু করে স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেট পর্যন্ত সবাই সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হচ্ছেন। এটি কেবল একটি সাংবিধানিক সংস্কার নয়, বরং বিচার বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে চলা দায়মুক্তি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।

ভোটের আগের দিন প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “যারা বিচার বিভাগের দুর্নীতিপূর্ণ ও বিশেষাধিকারপ্রাপ্ত পুরোনো শাসন বজায় রাখতে চায়, তারাই নির্বাচন নিয়ে কারচুপির অভিযোগ তুলছে। এই সংস্কার গণতন্ত্রের পথে এক সাহসী পদক্ষেপ, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনবে।”

৫৭ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত নাগরিক আর্তুরো গিসেমান বলেন, “বিচার বিভাগের যে দুর্নীতি আমি দেখেছি, তাতে আমার আস্থা নষ্ট হয়েছে। তাই এবার পরিবর্তনের অংশ হতে আমি ভোট দিয়েছি।”

তবে প্রথমবারের এই নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ আশানুরূপ হয়নি। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ১৩ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।

নতুন এই পদ্ধতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকেই মনে করছেন, বিচারপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাধারণ ভোটারদের সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। কারণ এতে শত শত প্রার্থীর অভিজ্ঞতা, নৈতিকতা ও ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই প্রয়োজন হয়।

সান দিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ডেভিড শার্ক বলেন, “সাধারণ ভোটারদের পক্ষে শত শত প্রার্থীর তথ্য বিশ্লেষণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। বরং এতে বিচার বিভাগ আরও বেশি রাজনৈতিক প্রভাবের মুখে পড়তে পারে।”

তার মতে, মেক্সিকোয় বিচার বিভাগের প্রকৃত দুর্নীতির কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সরকারি কৌঁসুলিদের দপ্তর, যেখানে সংস্কার প্রয়োজন।

নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী প্রার্থীদের জন্য ছিল নির্দিষ্ট যোগ্যতার শর্ত: আইন বিষয়ে ডিগ্রি, প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা, কোনো ফৌজদারি মামলা না থাকা এবং ‘ভালো সুনাম’।

এবারের নির্বাচনে প্রায় ৮৮০ জন ফেডারেল বিচারক নির্বাচিত হয়েছেন, যাদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরাও রয়েছেন। পাশাপাশি নির্বাচিত হয়েছেন শত শত স্থানীয় বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেট। অবশিষ্ট পদগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৭ সালে।

মেক্সিকোর এই ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ নিয়ে যেমন দেশে আশাবাদ তৈরি হয়েছে, তেমনি রয়েছে প্রশ্ন ও শঙ্কাও। একদিকে সরকার এটিকে গণতন্ত্রের অগ্রগতি হিসেবে দেখছে, অন্যদিকে বিশ্লেষকদের সতর্কতা—এতে বিচার বিভাগ অপরাধী ও রাজনৈতিক গোষ্ঠীর হস্তক্ষেপের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

তবুও, এটুকু নিশ্চিতভাবে বলা যায়—মেক্সিকোর ইতিহাসে এটি এক যুগান্তকারী প্রয়াস, যা ভবিষ্যতে দেশের বিচারব্যবস্থার রূপরেখায় গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

Leave a Reply

scroll to top