মাত্র তিন সপ্তাহের দাম্পত্য জীবন, এরই মধ্যে স্ত্রী-শাশুড়িকে গলা কেটে হত্যা

New-Project-21-1.jpg

অভিযুক্ত বাদল খান, স্ত্রী চম্পা বেগম ও শাশুড়ি ফরিদা বেগম (বাম থেকে ডানে)

পিরোজপুর প্রতিনিধি

পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার ধাওয়া গ্রামে ঘটে গেছে এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড। মাত্র তিন সপ্তাহ আগে বিয়ে হওয়া স্ত্রী এবং শাশুড়িকে গলা কেটে নির্মমভাবে হত্যা করে পলাতক রয়েছেন অভিযুক্ত ঘাতক ওবায়দুল হক বাদল খান (৪৫)। সোমবার (৫ মে) রাত আনুমানিক ১১টার দিকে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

নিহতদের পরিচয়

নিহতরা হলেন, ধাওয়া গ্রামের বাসিন্দা ফরিদা বেগম (৬৫) ও তার মেয়ে চম্পা বেগম (৩৫)। বাদল খান একই গ্রামের মৃত আজিজ খানের ছেলে এবং ধাওয়া বাজারে তার একটি চায়ের দোকান রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চাচাতো বোন চম্পা বেগমের সঙ্গে বাদলের বিয়ে হয় গত ১৬ এপ্রিল। তবে বিয়ের পর থেকেই চম্পার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিলেন বাদল। জানা গেছে, এটি বাদলের চতুর্থ বিয়ে; আগের তিন স্ত্রীই তার নির্যাতনের কারণে তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। বাদল একই বাড়িতে নতুন স্ত্রী চম্পা, শাশুড়ি ফরিদা এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর শিশু সন্তান ইয়াসিনকে নিয়ে বসবাস করতেন।

স্বজনদের অভিযোগ

নিহত ফরিদা বেগমের বড় মেয়ে খাদিজা বেগম অভিযোগ করেন, বিয়ের পর থেকেই বোন চম্পার সঙ্গে বাদলের দাম্পত্য জীবন কলহে ভরা ছিল। সোমবার রাতে বাদল মা-মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করে, এরপর ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ওই সময় ঘরে থাকা শিশু ইয়াসিন কোনোমতে পালিয়ে পাশের বাড়িতে গিয়ে প্রতিবেশীদের খবর দেয়। স্থানীয়রা দ্রুত ছুটে এসে আগুন নিভিয়ে মৃতদেহ দুটি উদ্ধার করেন।

চম্পার মামাতো বোন ও প্রতিবেশী নাসিমা বেগম জানান, “ইয়াসিন এসে জানায় ঘরে আগুন, এরপর আমরা গিয়ে দেখি চম্পা ও ফরিদার নিথর দেহ পড়ে আছে এবং তাদের শরীরে আগুন জ্বলছিল। পানি ঢেলে আগুন নিভাই।” ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা ও কুঠাল উদ্ধার করেছে পুলিশ।

পুলিশ যা বলছে

ভাণ্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমদ আনওয়ার জানান, “পুলিশ লাশ দুটি উদ্ধার করেছে, তবে ঘাতক বাদল পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”

পিরোজপুরের পুলিশ সুপার খাঁন মুহাম্মদ আবু নাসের বলেন, “ঘটনার রহস্য উদঘাটনে সিআইডি, ডিবি ও অন্যান্য সংস্থার সমন্বয়ে তদন্ত চলছে। বাদলকে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাকে আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে।” তিনি আরও জানান, হত্যাকাণ্ডের সময় ঘরে থাকা শিশু ইয়াসিন এখনও নিখোঁজ, তাকে পাওয়া গেলে তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হতে পারে।

এই জোড়া হত্যাকাণ্ডে এলাকাজুড়ে চরম আতঙ্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা দ্রুত ঘাতকের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

Leave a Reply

scroll to top