লোকাল বাসের মহাসড়ক দখল: ঈদযাত্রার প্রধান বাধা

New-Project-14-3.jpg
মুহাম্মদ নূরে আলম এম আলী

ঈদের কাউন্টডাউন শুরু হতেই দেশজুড়ে শুরু হয় ঘরমুখো মানুষের ঢল। দক্ষিণ, উত্তর বা পশ্চিম—সব রুটেই মানুষের স্বজনের টানে ছুটে চলা। কিন্তু সেই চিরচেনা আনন্দের সঙ্গে আবারও ফিরে এসেছে দুর্ভোগের ভয়াল ছায়া। এবারের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু যমুনা সেতু, যেখানে মাত্র কয়েকটি গাড়ির বিকল হওয়ায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। হাজার হাজার যাত্রী ঘণ্টার পর ঘণ্টা তীব্র গরমে আটকে থাকায় এই প্রশ্নটা আবার উঠেছে—এই ব্যবস্থাপনা কি সত্যিই ঈদের চাপ সামাল দিতে প্রস্তুত?

শুক্রবার (১৩ জুন) মধ্যরাতে যমুনা সেতুর ওপর একটি পিকআপ ও ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। সঙ্গে আরও কয়েকটি গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে। এর জেরে সেতু কর্তৃপক্ষ টোল আদায় বন্ধ করে দেয়। বিকল গাড়িগুলো সরাতে লেগে যায় প্রায় রাতভর। ফলাফল—টোল প্লাজা থেকে রাবনা বাইপাস পর্যন্ত পুরো মহাসড়ক রূপ নেয় চলন্ত যাত্রার যমজট ব্যারিকেডে।

একটি গাড়ির বিকলে যদি ২০ কিমি মহাসড়ক অচল হয়ে পড়ে, তাহলে সেটি শুধু যানবাহনের নয়, এটি পরিকল্পনার, প্রস্তুতির ও প্রতিক্রিয়ার চরম ব্যর্থতা।

ঈদে রাজধানীর ভেতরে চলা লোকাল বাস উঠে আসে মহাসড়কে। যাদের অধিকাংশের নেই রুট পারমিট, ফিটনেস সার্টিফিকেট বা ন্যূনতম মানের ট্রাফিক শৃঙ্খলা জ্ঞান। মাঝ রাস্তায় যাত্রী ওঠানামা, হঠাৎ থেমে যাওয়া, লেন ভেঙে চলা—সব মিলিয়ে জাতীয় মহাসড়ক পরিণত হয় লোকাল সড়কের মতো বিশৃঙ্খল এক পথঘাটে।

এবং প্রশাসন? তারা যেন ঈদের সময় ‘কনভেনশনাল ওয়ার্নিং’ দিয়ে দায় শেষ করে। মাইকিং, দিকনির্দেশনা ও হালকা ট্রাফিক প্ল্যান—এসব দিয়ে কোটি মানুষের চলাচল সামাল দেওয়া যাবে না, তা বারবার প্রমাণিত হলেও শিক্ষা নেই।

যমুনা সেতুতে এখনও পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল টোল আদায় ব্যবস্থা চালু হয়নি। ফলে সামান্য দুর্ঘটনাতেই বন্ধ হয়ে যায় টোল কার্যক্রম, যা একেকবার তৈরি করে দীর্ঘ যানজট। সেতুর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ২৪/৭ রিকভারি টিম ও জরুরি সহায়তা ইউনিট থাকা সত্ত্বেও সেটি কার্যকরভাবে মাঠে নামে না।

ঈদের সময় বাড়তি চাপের জন্য ছিল না পরিবহন খাত ও ট্রাফিক বিভাগের মধ্যে সমন্বয়। দায়সারা প্রস্তুতি ও কাগুজে প্ল্যান বাস্তবতার মুখোমুখি হলে অসহায় হয়ে পড়ে পুরো ব্যবস্থা। একবার ভাবুন, একটি গাড়ির বিকল হওয়া পুরো রুট অচল করে দেয়—এটি কি কেবলই দুর্ঘটনা, নাকি একটি ব্যর্থ ব্যবস্থাপনার প্রতিচ্ছবি?

সমাধানের পথ কী?

কঠোর নিয়ন্ত্রণ: ঈদের সময় ফিটনেসবিহীন, রুট পারমিটবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ।

ডিজিটাল টোল ব্যবস্থা: আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুত টোল আদায় ও স্বয়ংক্রিয় যানবাহন শনাক্তকরণ চালু।

মনিটরিং টিম: স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ নিয়ে ঈদকেন্দ্রিক মনিটরিং টিম গঠন।

এক্সপ্রেস লেন: দূরপাল্লার গাড়ির জন্য নির্ধারিত লেন চালু, যাতে করে লোকাল যানবাহনের প্রভাব না পড়ে।

দ্রুত রিকভারি ইউনিট: প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টা কার্যকর রিকভারি ইউনিট মোতায়েন।

ঈদ মানেই আনন্দ, কিন্তু যমুনা সেতুর মতো ঘটনা সেই আনন্দ ম্লান করে। একটি গাড়ির বিকল হওয়া পুরো যাত্রাপথ অচল করার মতো ঘটনা আর সহ্য করা যায় না। কঠোর নিয়ন্ত্রণ, আধুনিক প্রযুক্তি, এবং মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঈদযাত্রাকে নিরাপদ করতে হবে। নিরাপদ যাত্রা যাত্রীদের অধিকার, কোনো অনুগ্রহ নয়। এখনই সময় ‘মাইকিং’ থেকে বেরিয়ে মাঠে কাজ শুরু করার।

মুহাম্মদ নূরে আলম

মুহাম্মদ নূরে আলম

মুহাম্মদ নূরে আলম (Muhammad Noora Alam) একজন অভিজ্ঞ সাংবাদিক ও কনটেন্ট বিশেষজ্ঞ, যিনি পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রিন্ট, অনলাইন এবং ডিজিটাল মিডিয়ায় কাজ করে যাচ্ছেন।

Leave a Reply

scroll to top