ডাকসু নির্বাচনে নতুন গঠনতন্ত্রে আইনি পরিবর্তন, সভাপতির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে করা যাবে মামলা

New-Project-40-2.jpg

ডাকসু নির্বাচনে নতুন গঠনতন্ত্রে আইনি পরিবর্তন, সভাপতির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে করা যাবে মামলা

ঢাবি প্রতিনিধি

দীর্ঘদিনের বিতর্ক, সংশোধন ও প্রতীক্ষার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) গঠনতন্ত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত ‘চূড়ান্ত সংশোধনী প্রস্তাব’-এ ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা, কার্যক্রমের পরিধি ও নেতৃত্ব কাঠামোতে একাধিক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন অনুমোদন করা হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংশোধনীর মাধ্যমে একদিকে যেমন ডাকসুর কর্মকাণ্ডকে আরও লক্ষ্যভিত্তিক করার চেষ্টা করা হয়েছে, অন্যদিকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কের জন্মও দিয়েছে।

নতুন গঠনতন্ত্র

নতুন গঠনতন্ত্র অনুসারে, ডাকসুর ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন থেকে কেবল ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি হওয়া, আবাসিক হলের সঙ্গে যুক্ত, পূর্ণকালীন ছাত্রছাত্রী এবং যাদের বয়স ৩০ বছরের কম, তারাই ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন। সন্ধ্যাকালীন কোর্স, পেশাগত কোর্স, ভাষা কোর্স ও পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা ভোটার হওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এই প্রথমবার ভোটারের সর্বোচ্চ বয়সসীমা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হলো।

গঠনতন্ত্রের দ্বিতীয় ধারা

গঠনতন্ত্রের ২য় ধারায় (উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য) উল্লেখ করা হয়েছে, ডাকসু শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার আদর্শ লালন করবে না; এর সঙ্গে সংযোজিত হয়েছে ১৯৬৯ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ বাংলাদেশের সমস্ত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেতনা।
এছাড়া কার্যক্রমের পরিধি প্রসঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক, পত্রিকা প্রকাশ ও খেলাধুলার আয়োজনের পাশাপাশি, ছাত্রছাত্রীদের অধিকার রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা রাখা এবং সামাজিক সেবা কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বও ডাকসুর ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে।

পরিবর্তন এসেছে যেসব ধারায়

গঠনতন্ত্রের ৫ম ধারায়ও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) ডাকসুর সব সভায় সভাপতিত্ব করতেন। এখন থেকে ভিসি কেবল কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করবেন। ডাকসুর সামগ্রিক কার্যক্রমের তদারকি করবেন তিনি, এবং প্রয়োজনে গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সংগতি রেখে জরুরি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। উপাচার্য বা কোষাধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) সব সভায় সভাপতিত্ব করবেন। জেনারেল সেক্রেটারি (জিএস) ও অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল সেক্রেটারির (এজিএস) দায়িত্বের কাঠামো অপরিবর্তিত রয়েছে।

গঠনতন্ত্রের ৬৯ নম্বর অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এনে বলা হয়েছে, নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে কোনো প্রার্থী ফলাফলের বিরুদ্ধে সভাপতির কাছে আপত্তি জানাতে পারবেন। পূর্বে সভাপতির সিদ্ধান্তই ছিল চূড়ান্ত এবং তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা যেত না। কিন্তু সংশোধিত গঠনতন্ত্রে ‘আদালতে মামলা করা যাবে না’ এই বিধান বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে এখন সভাপতির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার সুযোগ থাকছে, তবে সেটি করতে হবে ফলাফল প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একদিকে নতুন গঠনতন্ত্র ডাকসুর প্রশাসনিক কাঠামোকে শক্তিশালী করবে, অন্যদিকে কিছু বিধিনিষেধ ডাকসুর সর্বজনীন চরিত্রকে সংকীর্ণ করতে পারে। বিশেষ করে, সন্ধ্যাকালীন কোর্স, পেশাগত কোর্স ও অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার বাতিল করায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কেউ কেউ এটিকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির আশঙ্কা হিসেবেও দেখছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, “ডাকসুকে সময়োপযোগী করতে এবং কার্যকর নেতৃত্ব তৈরির স্বার্থেই এই পরিবর্তন প্রয়োজন ছিল।” তবে অনেক শিক্ষার্থী মনে করছেন, পরিবর্তনগুলি বাস্তবায়নের সময় যাতে সাধারণ ছাত্রদের অধিকার খর্ব না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

Leave a Reply

scroll to top