রোববার (২০ এপ্রিল) ভোরে, শহর যখনও ঘুমে অচেতন, তখন কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কের বত্রিশ এলাকায় হঠাৎ করেই দেখা যায় একদল মানুষ কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে মিছিল করছে। হাতে একটি ব্যানার— যেখানে লেখা, ‘আইসিটি ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও নেতাদের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যক্রমের প্রতিবাদ।’
মুহূর্তের মধ্যেই দৃশ্যপট বদলে যায়। তারা যেমন দ্রুত এসেছিল, তেমনি মিছিল শেষ করেই অন্তর্হিত হয়। স্থানীয়রা বুঝে উঠার আগেই, রাজপথ আবারও নির্জন। এই ঘটনাটিকে ‘ঝটিকা মিছিল’ হিসেবে চিহ্নিত করছেন স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ফেসবুকে পোস্ট করা একটি ভিডিও থেকে জানা যায়, এই কর্মসূচির মূল পরিকল্পনায় ছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন। ভিডিওটিতে দেখা যায়, প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন নেতাকর্মী মিছিলে অংশ নেন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত।
রাজনৈতিক পরিবেশে এমন ঝটিকা মিছিলের তাৎপর্য কী?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোরবেলায় এমন গোপন ও সংক্ষিপ্ত মিছিল আয়োজন করার মাধ্যমে এক ধরনের ‘মেসেজ-পলিটিক্স’ চালানো হচ্ছে। উদ্দেশ্য— দলীয় শক্তির প্রদর্শন, প্রতিবাদের চিহ্ন রাখা, তবে সংঘর্ষ এড়িয়ে চলা। এটি যেমন একটি কৌশলী প্রতিবাদ, তেমনি বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় নিজেদের উপস্থিতি জানান দেওয়ার মাধ্যম।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, “শুনেছি একটি ঝটিকা মিছিল হয়েছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। অংশগ্রহণকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।”
রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন হঠাৎ হঠাৎ কর্মসূচি নতুন নয়। তবে মুখ ঢেকে মিছিল করা, সেটিকে অনেকেই দেখছেন প্রতীকী প্রতিবাদ ও রাজনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার মিশেল হিসেবে।
কেন মুখ ঢেকে মিছিল?
একজন ছাত্রলীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “যেহেতু দলীয়ভাবে বড় কর্মসূচি ঘোষণা হয়নি, তাই ঝটিকা আকারে একটা বার্তা দিতে চেয়েছি। মুখ ঢাকার পেছনে বিশেষ কারণ নেই, এটা একটা প্রতীকী প্রতিবাদ ছিল।”
অন্যদিকে, সমালোচকদের মতে, মুখ ঢেকে মিছিল করার অর্থই হচ্ছে— ভয়, নিরাপত্তাহীনতা অথবা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজপথে এমন আচমকা প্রতিবাদ রাজনীতির নতুন কৌশল হতে পারে। তবে এতে জনমনে বিভ্রান্তি বা আতঙ্ক তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
ঝটিকা মিছিলের মতো আচমকা কর্মসূচি আদৌ দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলে কি না, সেটি নিয়ে আলোচনা থাকতেই পারে। তবে এটুকু নিশ্চিত, রাজনীতি এখন আরও বেশি রূপ বদলাচ্ছে, কখনও দিনের আলোয়, আবার কখনও ভোরের অন্ধকারে।