দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে এক শিক্ষকের সঙ্গে ‘অযৌক্তিক ও অমানবিক আচরণের’ অভিযোগ করেছেন এক প্রাক্তন শিক্ষক। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ওই শিক্ষক দাবি করেছেন, চূড়ান্তভাবে নিয়োগ দেওয়ার পর হঠাৎ করেই তার চাকরির অফার বাতিল করেছে ব্র্যাক, যার ফলে পেশাগত ও ব্যক্তিগতভাবে তিনি মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
ঘটনার সূত্রপাত
জানা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব জেনারেল এডুকেশনে লেকচারার পদের জন্য আবেদন করেন তিনি। সফলভাবে দুই দফা মৌখিক পরীক্ষা, কাগজপত্র যাচাইসহ সব প্রক্রিয়া শেষে ২৮ এপ্রিল তাকে নিয়োগের মৌখিক নিশ্চয়তা দেওয়া হয় এবং ৯ মে অফিসিয়াল অফার লেটার পাঠানো হয়। এতে ১ জুন জয়েনিং তারিখ নির্ধারণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচআর বিভাগের একজন কর্মকর্তার পরামর্শে তিনি যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসার প্রস্তুতি নেন।
এপ্রিলে তার বর্তমান কর্মস্থল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নিয়োগ দেওয়া হয় এবং তিনি ১৪ মে পদত্যাগপত্র জমা দেন। ২০ মে বাংলাদেশের ফ্লাইটও বুক করেন। কিন্তু এর মাত্র একদিন পর, ১৫ মে, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় অফার লেটারটি “সাসপেন্ড” করে এবং কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে তার নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।
এইচআর বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট স্কুলের ডিনের কাছে যোগাযোগ করেও পাননি নির্দিষ্ট কারণ
একাধিকবার ব্র্যাকের এইচআর বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট স্কুলের ডিনের কাছে যোগাযোগ করেও কোনো নির্দিষ্ট কারণ পাননি বলে অভিযোগ করেন ওই শিক্ষক। তার ধারণা, ব্যক্তিগত বিশ্বাস, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়তা কিংবা ২০২৩ সালের জুলাইয়ের শিক্ষা আন্দোলন নিয়ে তার লেখালেখির কারণেই হয়তো এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে তিনি স্পষ্ট করেন যে, নিয়োগের পূর্বশর্ত হিসেবে করা ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাইয়ে তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অপরাধ বা অসঙ্গতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অক্সফোর্ডে কর্মরত ছিলেন অভিযোগকারী শিক্ষক
অভিযোগকারী শিক্ষক ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন এবং ২০২১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত একই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন। পরে তিনি ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল)-এ বৃত্তিসহ উচ্চশিক্ষা শেষে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও মূল্যায়ন বিভাগে কর্মরত ছিলেন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও সামাজিক মাধ্যমে তার সাফল্য previously উদযাপিত হলেও, এখন সেই প্রতিষ্ঠানের আচরণে তিনি বিস্মিত ও ব্যথিত।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট এইচআর কর্মকর্তা ও ডিনের দফতরও বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। যদিও একটি অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, “নীতিগত কারণে” নিয়োগ স্থগিত করা হয়ে থাকতে পারে।
অভিযোগকারীর বক্তব্য
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষক বলেন, “আমি আর ব্র্যাকে ফিরছি না। তবে এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমার মতো আরও অনেকে নিশ্চুপে এমন অন্যায়ের শিকার হচ্ছেন কি না, সেটিও চিন্তার বিষয়।”
তিনি বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপ ও গণমাধ্যমে সরব হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। একইসঙ্গে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া ও মানবিক আচরণ নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রীয় নজরদারির দাবি জানিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া
ঘটনাটি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। অনেকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগনীতির স্বচ্ছতা ও পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। একাধিক শিক্ষাবিদ মন্তব্য করেছেন, “ব্যক্তিগত মতাদর্শের ভিত্তিতে কাউকে বাদ দেওয়া নৈতিকভাবে দুর্ভাগ্যজনক ও শিক্ষার পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।”
বিতর্কিত এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শিক্ষকের লড়াই শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নয়, বরং ন্যায্যতা ও মুক্তচিন্তার পক্ষে এক সামাজিক প্রতিবাদ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।