মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে খালাস দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। আপিল বিভাগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে মঙ্গলবার (২৭ মে) এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করে।
সকাল ৯টা ৫২ মিনিটে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে এ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি ইমদাদুল হক, বিচারপতি মো. আসাদুজ্জামান এবং বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।
রায়ে যা বলা হয়েছে
রায়ে বলা হয়, এটি প্রমাণের ঘাটতি এবং যুক্তির ঘনিষ্ঠ পর্যালোচনার ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে। আদালত একই সঙ্গে আজহারুল ইসলামের তাৎক্ষণিক মুক্তির নির্দেশ দেন।
এই রায়ের ফলে বাংলাদেশের বিচার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো আসামি সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে খালাস পেলেন।
আজহারুল ইসলামের পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী মো. শিশির মনির, ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিক এবং ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক এবং প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন গাজী এম এইচ তামিম।
আদালত উপস্থিত ছিলেন শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা
রায় ঘোষণার সময় আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা, যাদের মধ্যে ছিলেন নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান এবং দলের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
এর আগে, ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এটিএম আজহারুল ইসলামকে ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে পাঁচটিতে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগসহ নানা অপরাধের দায়ে এই রায় ঘোষণা করা হয়েছিল।
২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আজহারুল ইসলামের পক্ষ থেকে খালাস চেয়ে আপিল করা হয়। ৯০ পৃষ্ঠার মূল আপিল এবং ২৩৪০ পৃষ্ঠার নথিপত্রসহ আদালতে উপস্থাপন করেন তার আইনজীবীরা। আপিল শুনানি শেষে ২০২৪ সালের ৮ মে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়।
জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে শুরু থেকেই এই মামলাকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ এবং ‘প্রহসনের বিচার’ বলে দাবি করে আসছিল। আজকের রায়ের পর তাদের দাবি আরও জোরালো ভিত্তি পেল বলে মন্তব্য করেন দলের আইনজীবীরা।
রায় নিয়ে দেশজুড়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় উঠেছে। কেউ এটিকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার উদাহরণ হিসেবে দেখছেন, কেউ আবার একে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেও আখ্যা দিচ্ছেন।