দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের সরকারি অনুমোদন পেল জবি

New-Project-13-11.jpg

দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের সরকারি অনুমোদন পেল জবি

২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

দীর্ঘ আন্দোলন, প্রতিশ্রুতি ও প্রত্যাশার পর অবশেষে সরকারি অনুমোদন পেল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্প। ২০২৫ সালের ২৮ মে, বুধবার, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পের সরকারি আদেশ (জিও) জারি করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভাষ্য অনুযায়ী, এই প্রকল্প অনুমোদন জবির জন্য একটি ঐতিহাসিক অর্জন। প্রশাসনের তরফে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, অভিভাবক এবং সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর, কোষাধ্যক্ষ, শিক্ষক সমিতি ও সিন্ডিকেট সদস্যরা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের অনুমোদনকে ‘দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণে প্রথম ধাপ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

কী আছে প্রকল্পে?

কেরানীগঞ্জে ২০০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস। এতে একাধিক একাডেমিক ভবন, আবাসিক হল, গবেষণাগার, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, খেলার মাঠ, ছাত্র-ছাত্রীদের কমনরুম এবং পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।

২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জায়গা সংকটে ভোগা জবি শিক্ষার্থীদের জন্য দ্বিতীয় ক্যাম্পাস ছিল বহু প্রতীক্ষিত দাবি। মূল ক্যাম্পাস পুরান ঢাকার সঙ্কুচিত বাণিজ্যিক এলাকায় হওয়ায় একাডেমিক পরিবেশ বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।

আন্দোলনের ইতিহাস: প্রতিশ্রুতি বনাম বাস্তবতা

এই প্রকল্প অনুমোদনের পেছনে রয়েছে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩ সালের মার্চে কেরানীগঞ্জে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের নির্মাণকাজ দ্রুত শুরুর দাবিতে টানা এক সপ্তাহের আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। সে সময় উপাচার্যের আশ্বাস ও উন্নয়ন সংক্রান্ত একটি ভিডিওচিত্র দেখিয়ে আন্দোলনকারীদের শান্ত করা হয়েছিল।

পরবর্তীতে, ২০২৪ সালে আবারও শিক্ষার্থীরা “ভবিষ্যতের জবি চাই” ব্যানারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধন করে। দাবি ছিল স্পষ্ট—লিখিত প্রকল্প অনুমোদন ও দৃশ্যমান কাজ ছাড়া কোন আশ্বাস তারা মানবে না। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের একাংশ প্রকল্প বাস্তবায়নে গঠিত কমিটির স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে।

শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া: স্বস্তি, কিন্তু সংশয়ও

নতুন প্রকল্প অনুমোদনের খবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ এটিকে নিজেদের আন্দোলনের সফলতা হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ মনে করছেন, এটি কেবল সময়ক্ষেপণের আরেক ধাপ।

১৭তম ব্যাচের ছাত্র সাদ মাহমুদ বলেন, “এই প্রকল্প অনুমোদন আমাদের আন্দোলনের ফসল। এখন আর পেছনে তাকানোর সময় নেই—ত্বরিত বাস্তবায়নই এখন মূল দাবি।”

অন্যদিকে, ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বললেন, “আমরা বারবার শুনেছি—‘শিগগির কাজ শুরু হবে’। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। সরকারি জিও এসেছে—ভালো। কিন্তু কাজ শুরু না হওয়া পর্যন্ত এটা কাগুজেই রয়ে গেল।”

আরেকজন শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তন্বী সরকার বললেন, “আমরা চাই এই প্রকল্প যেন আর কোনো প্রশাসনিক কাগজে আটকে না থাকে। যারা এখন পড়ছে, তাদের জন্য হলেও যেন দ্রুত অন্তত একটা ভবন নির্মাণ শুরু হয়।”

ভবিষ্যতের প্রশ্ন: কবে শুরু হবে কাজ?

যদিও প্রকল্প অনুমোদন একটি বড় ধাপ, তবে বাস্তবায়ন শুরু কবে হবে—তা নিয়ে এখনো নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি। প্রকল্পের বাজেট, দরপত্র আহ্বান, টেন্ডার প্রক্রিয়া ও নিয়োগ–সবকিছু মিলে এই প্রকল্পের প্রথম ইট বসতে সময় লাগতে পারে আরও কিছু মাস। তবে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, ২০২৫ সালের মধ্যেই কাজ দৃশ্যমান হবে।

অর্থনৈতিক, অবকাঠামোগত ও প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতার মাঝেও এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য হবে গেম চেঞ্জার—এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Leave a Reply

scroll to top