ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে ঘোষণার বিষয়ে চলমান আইনি জটিলতা ও রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যেই মুখ খুললেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া। তিনি পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, “ইশরাক হোসেনের মেয়র হওয়া না হওয়ার বিষয়টি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। আইনি জটিলতা থাকার পরও আমাকে কেউ অবাঞ্ছিত ঘোষণা করবে কিংবা দোষারোপ করবে—এটি কোনোক্রমেই সমীচীন নয়।”
এই বক্তব্য তিনি দিয়েছেন মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুরে সাভারের জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট আয়োজিত দিনব্যাপী ‘যুব সমাবেশ ২০২৫’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে। সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং কিছু রাজনৈতিক মহলে তার নাম ঘিরে বিতর্ক ছড়ালে এই প্রতিক্রিয়া দেন তিনি।
উল্লেখ্য, ইশরাক হোসেন, যিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বিএনপি-সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী হিসেবে পরিচিত, তাকে ঘিরে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। যদিও আদালতে এখনো চূড়ান্ত রায় আসেনি, তারপরও তার মেয়রপদে অধিষ্ঠিত হওয়া নিয়ে নানামুখী বক্তব্য ভেসে বেড়াচ্ছে।
আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, “আদালতের রায় ও আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ পাওয়ার পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। কোনো ব্যক্তি বা পক্ষের আবেগের ভিত্তিতে নয়, বরং আইনানুগ প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত হবে। আমি কোনো বেআইনি সিদ্ধান্তের অংশ নই, বরং সবসময় প্রশাসনিক স্বচ্ছতা বজায় রাখার চেষ্টা করি।”
যুবসমাবেশে মূল বক্তব্যে উপদেষ্টা বাংলাদেশের তরুণদের সম্ভাবনা ও অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের তরুণ সমাজ আজ যে আগ্রহ, উদ্যম এবং সক্ষমতা দেখাচ্ছে, তা জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় শক্তি। আমরা বিশ্বাস করি, তরুণদের সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অনেক বেশি সমৃদ্ধ হবে।”
তিনি তাঁর বক্তব্যে ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের সময় তরুণদের সক্রিয়তা ও দেশপ্রেমের উদাহরণ টেনে আনেন। বলেন, “ঠিক যেভাবে তরুণরা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে সামনে এসেছে, অর্থনীতির অগ্রযাত্রাতেও তাদের সক্রিয়তা প্রয়োজন।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মহা. বশিরুল আলম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুব-উল-আলম, যুব উন্নয়ন অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান এবং মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব কাজী মোশতাক জহির। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহফুজুর রহমান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত যুব প্রতিনিধি ও পুরস্কারপ্রাপ্ত উদ্যোক্তারা।
যুব সমাবেশে আলোচনার মূল প্রতিপাদ্য ছিল—‘দক্ষ যুব, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’। তরুণদের কর্মসংস্থান, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যতের বিষয়ে একাধিক আলোচনা হয়।
এদিকে রাজনৈতিক মহলে ধারণা করা হচ্ছে, ইশরাক হোসেন ইস্যুকে কেন্দ্র করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ওপর যেভাবে চাপ তৈরি হচ্ছে, সেটি প্রশাসনিক শিষ্টাচার ভঙ্গের উদাহরণ হয়ে উঠছে। তিনি আইনের পথেই সিদ্ধান্ত হবে—এই বার্তা দিয়ে রাজনৈতিক চাপ মোকাবিলা করেছেন।
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এটি শুধুমাত্র একটি প্রশাসনিক ব্যাখ্যা নয়, বরং এক ধরনের কৌশলগত অবস্থানও, যা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সমীকরণে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ভূমিকাকে আরও দৃঢ় করবে।