সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে নিষিদ্ধ হচ্ছে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন

সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে নিষিদ্ধ হচ্ছে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন

প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন হয়, সুন্দরবনের আশপাশে এমন স্থাপনা নিষিদ্ধে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫: সুন্দরবনের সুরক্ষায় বড় পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণের স্বার্থে সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটার পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (Ecologically Critical Area – ECA) এর মধ্যে নতুন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা প্রকল্প স্থাপন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে শিগগিরই একটি প্রজ্ঞাপন জারি করবে।

সোমবার (২১ এপ্রিল) বাংলাদেশ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন কমিটির নির্বাহী কমিটির ১৬তম সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও পরিবেশবাদী আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

সভায় ২০১৭ সালের জাতীয় পরিবেশ কমিটির ৩.৪.৪ নম্বর সিদ্ধান্ত এবং ২০২১ সালের নির্বাহী কমিটির আগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এই নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সুন্দরবনের ইসিএ এলাকার মধ্যে ইতোমধ্যে স্থাপিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি দল গঠন করা হবে। প্রভাব মূল্যায়নের পর আদালতের নির্দেশ অনুসারে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সভায় আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ। সংশোধনের পর সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও এনজিওসমূহ যৌথভাবে জলবায়ু প্রকল্প প্রস্তাব করতে পারবে, যা ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে বাস্তবায়িত হতে পারবে। এ ছাড়া শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় থেকে মতামত আহ্বান করা হবে।

পরিবেশ সংরক্ষণ কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করতে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের এনফোর্সমেন্ট বাজেট বৃদ্ধির প্রস্তাব সভায় গৃহীত হয়েছে। বন বিভাগের কর্মচারীদের ঝুঁকিভাতা চালু ও তা বৃদ্ধির বিষয়ে প্রস্তাব প্রণয়ন করা হবে বলেও সভায় জানানো হয়।

স্থায়ী ও পরিবেশবান্ধব নির্মাণ উৎসাহিত করতে ২০২৫ সালের মধ্যে সকল সরকারি ও বেসরকারি ভবন নির্মাণে অন্তত ৩০ শতাংশ পরিবেশবান্ধব ব্লক ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সচিব পর্যায়ের সমন্বয় সভা আগামী মে মাসে অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক ই আজম বীরপ্রতীক এবং কৃষি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

এছাড়াও, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ এহছানুল হক; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারজানা মমতাজ; বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান; স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোঃ রেজাউল মাকছুদ জাহেদী; গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নজরুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

সভায় কমিটির সদস্য সচিব ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ) ড. ফাহমিদা খানম পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার মাধ্যমে গত সভার সিদ্ধান্ত এবং চলতি সভার আলোচ্য বিষয় তুলে ধরেন।

সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় এ ধরনের সিদ্ধান্তকে পরিবেশবাদীরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কার্যকর মনিটরিং ও প্রয়োগ নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশ তার পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় এক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Leave a Reply

scroll to top