অস্ত্রবিরতির পরদিনই চেনাব নদীর ওপর নির্মিত বাগলিহার ও সালাল বাঁধের একাধিক গেট খুলে দিয়েছে ভারত। এতে নতুন করে পাকিস্তানের দিকে পানি প্রবাহ শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে, কারণ হঠাৎ এই পানি প্রবাহে চেনাবের নিচু অঞ্চলগুলো প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাকিস্তানের প্রশাসন ইতোমধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ কিছু এলাকায় বন্যা সতর্কতা জারি করেছে।
পানি আটকে দেওয়ার কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত
এর আগে পহেলগাঁও হামলায় একাধিক ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার ঘটনার পর পাকিস্তানের প্রতি কড়া অবস্থান নেয় ভারত সরকার। সেই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের দিকে প্রবাহিত পানি কিছুদিনের জন্য আটকে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে পাকিস্তানি নাগরিকদের দেশ ছাড়ার নির্দেশ এবং সাময়িকভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দেয় নয়াদিল্লি।
এই ঘোষণার পরপরই চেনাব নদীর গুরুত্বপূর্ণ দুটি বাঁধ—বাগলিহার এবং সালাল—এর গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে নদীর পাকিস্তান অংশে পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়, যার ফলে কৃষি, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও জনজীবনে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে।
হঠাৎ গেট খোলার কারণ কী?
ভারতীয় গণমাধ্যম এবং প্রশাসনিক সূত্র বলছে, সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে টানা ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ওই বাঁধগুলোতে অতিরিক্ত পানি জমা হতে থাকে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, বাঁধের নিরাপত্তার স্বার্থে গেট খুলে পানি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত পানি আটকে রাখা হতো, তাহলে বাঁধের ওপর চাপ বেড়ে গিয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতে পারত। ফলে পানি ছেড়ে দেওয়া ছিল প্রযুক্তিগত ও নিরাপত্তাজনিত একটি বাধ্যতামূলক পদক্ষেপ।
পাকিস্তানে সম্ভাব্য প্রভাব
ভারতের এমন পদক্ষেপে পাকিস্তানে আবারও পানি প্রবাহ শুরু হলেও, হঠাৎ পানি আসায় নিচু অঞ্চলগুলোতে দেখা দিয়েছে প্লাবনের আশঙ্কা। বিশেষ করে পাঞ্জাব, গুজরাট ও সিয়ালকোট অঞ্চলে নদীর তীরবর্তী এলাকা জুড়ে সতর্কতা জারি করেছে পাকিস্তান। কয়েকটি এলাকায় জরুরি উদ্ধার ও ত্রাণ ব্যবস্থাও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পাকিস্তান সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, “আমরা চেনাব নদীর প্রবাহ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। ভারত থেকে আসা অতিরিক্ত পানির কারণে কিছু এলাকা ইতিমধ্যেই প্লাবিত হয়েছে। মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।”
রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ভারতের পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত আবারও সিন্ধু পানিচুক্তি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ এবং প্রতিশোধমূলক কৌশলের অংশ হিসেবেই ভারত পানি আটকে রেখে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছিল। যদিও ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও দাবি করছে, এটি ছিল কেবল একটি সাময়িক ও কারিগরি পদক্ষেপ।
সিন্ধু পানি চুক্তি প্রসঙ্গ
১৯৬০ সালে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু পানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা বিশ্বে অন্যতম স্থায়ী দ্বিপাক্ষিক পানি চুক্তি হিসেবে পরিচিত। এই চুক্তির আওতায় ভারত, চেনাবসহ তিনটি পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীর পানি পাকিস্তানে প্রবাহ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে ভারতের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ চুক্তির ভবিষ্যৎ ও রাজনৈতিক গুরুত্বকে নতুন করে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।