দীর্ঘদিন ধরে কাশ্মীর ইস্যুতে যে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার ঘোর বিরোধিতা করে আসছে ভারত, সেই কৌশলে এবার ভাঙন ধরালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হঠাৎ করেই কাশ্মীর সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়ে একপ্রকার কূটনৈতিক চাপে ফেলেছেন দিল্লিকে।
গত শনিবার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক ঘোষণায় ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে চার দিনব্যাপী সীমান্ত উত্তেজনার অবসান ঘটিয়ে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। এরপর আরেকটি পোস্টে তিনি কাশ্মীর সংকট সমাধানে দুই দেশের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
ঐতিহাসিক অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক দিল্লির দৃষ্টিভঙ্গি
ট্রাম্পের এই প্রস্তাবের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ভারতের দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক অবস্থান। দিল্লি বরাবরই কাশ্মীরকে নিজেদের “অবিচ্ছেদ্য অংশ” হিসেবে বিবেচনা করে এবং যেকোনো আলোচনায় তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপকে অগ্রহণযোগ্য বলে জানিয়ে এসেছে। ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শ্যাম শরণ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেন, “অবশ্যই ভারতীয় পক্ষ এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানাবে না। এটি আমাদের বহু বছরের স্থায়ী অবস্থানের পরিপন্থি।”
ইসলামাবাদের ইতিবাচক সাড়া
তবে ভিন্নমুখী প্রতিক্রিয়া এসেছে পাকিস্তান থেকে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “জম্মু ও কাশ্মীর সংকট সমাধানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আগ্রহকে আমরা স্বাগত জানাই। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা, যার প্রভাব দক্ষিণ এশিয়া ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে।”
পটভূমি: উত্তেজনার মূল উৎস ও সাম্প্রতিক ঘটনা
কাশ্মীর সংকটের সূত্রপাত ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর থেকেই। উভয় দেশই অঞ্চলটিকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে এবং একাধিকবার এই নিয়ে সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক উত্তেজনার সূচনা ঘটে পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর। ভারত একতরফাভাবে পাকিস্তানকে দায়ী করলেও, ইসলামাবাদ তা দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। উত্তেজনার প্রেক্ষিতে সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করে দুই দেশই শক্তিপ্রদর্শন করে।
মার্কিন হস্তক্ষেপে দিল্লির অস্বস্তি
কাশ্মীর ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ববর্তী ভূমিকা সীমিত ও মিশ্র সাফল্যের হলেও, এবার ট্রাম্পের সরাসরি মধ্যস্থতার প্রস্তাবে দিল্লি গভীর অস্বস্তিতে পড়েছে। কারণ, এটি ভারতের ঐতিহ্যগত দ্বিপাক্ষিক আলোচনার নীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।