বাংলাদেশি চারটি প্রধান টেলিভিশন চ্যানেল—যমুনা টিভি, একাত্তর টিভি, বাংলাভিশন এবং মোহনা টিভির ইউটিউব চ্যানেল ব্লক করে দিয়েছে ভারত সরকার। ফলে এখন থেকে দেশটির ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা এই চ্যানেলগুলোর কোনো ভিডিও কনটেন্ট দেখতে পারছেন না।
ঘটনার সত্যতা
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেলগুলো। যমুনা টিভির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা ইউটিউব কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একটি নোটিশ পেয়েছে, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে—ভারত সরকারের অনুরোধে চ্যানেলটি সেখানে ব্লক করা হয়েছে। নোটিশে আরও বলা হয়, ভারতের আইন অনুযায়ী ভবিষ্যতের কোনো ভিডিও সেদেশের দর্শকদের জন্য দৃশ্যমান থাকবে না।
স্বাধীন গবেষণা ও ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা ডিসমিসল্যাব জানায়, তারা ভারতীয় আইপি দিয়ে ৩৮টি বাংলাদেশি চ্যানেল পরীক্ষা করে দেখে নিশ্চিত হয়েছে, শুধুমাত্র এই চারটি চ্যানেল এখন ভারতীয় ব্যবহারকারীদের জন্য অবরুদ্ধ। ভারতীয় একাধিক সাংবাদিক ও ইউটিউব ব্যবহারকারী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন যে, স্ক্রিনে “This content is currently unavailable in this country because of an order from the government related to national security or public order” বার্তা দেখা যাচ্ছে।
আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায় নি ভারতীয় সম্প্রচার মন্ত্রণালয়
ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি না দিলেও, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ব্লক করার পেছনে “জাতীয় নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষা”র কারণ দেখানো হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত এমন সময়ে এলো, যখন ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ভারত একাধিক পাকিস্তানি ইউটিউব চ্যানেল, এমনকি সাবেক ক্রিকেটার শোয়েব আখতারের ইউটিউব চ্যানেলও ব্লক করেছে।
এই পদক্ষেপ বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যদিও বাংলাদেশ সরকার এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি, কূটনৈতিক মহলে আলোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকে একে বাকস্বাধীনতা ও তথ্যপ্রবাহে হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছেন।
গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্বেগ
বাংলাদেশের গণমাধ্যমকর্মীরা বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ার দুই ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দেশের মধ্যে এমন তথ্য নিয়ন্ত্রণের ঘটনা সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য অশনিসংকেত।
বাংলাদেশের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ তাইয়েব আহমদ ফেসবুকে লিখেছেন, “এই পদক্ষেপ ভারতে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের অধিকার লঙ্ঘন করেছে, যারা নিয়মিত এই চ্যানেলগুলো দেখেন।” তিনি আরও বলেন, “এটি আন্তর্জাতিক ভোক্তা অধিকার নীতিমালার পরিপন্থী।” তিনি ইউটিউবের কাছে এই ব্লকিংয়ের বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করেছেন এবং প্রয়োজনে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক উদ্যোগের প্রত্যাশা করছেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে তথ্যপ্রবাহ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় প্রভাব ফেলতে পারে।