নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নে দীর্ঘদিনের বিদ্যুৎ সংকট এবার বিস্ফোরণের রূপ নিয়েছে। শনিবার (২৪ মে) নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দারা স্কুল শিক্ষার্থীসহ একযোগে রাস্তায় নেমে আসেন। চনপাড়া-নগরপাড়া সড়কে ঘণ্টাব্যাপী টায়ারে আগুন ও গাছের গুঁড়ি ফেলে চলাচল বন্ধ করে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।
এই বিক্ষোভ নিছক একটি মুহূর্তের ক্ষোভ নয়; এটি দীর্ঘদিন ধরে চলা অব্যবস্থাপনা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে একগুছানো প্রতিক্রিয়া। কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৪২টি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহের চিত্র অত্যন্ত করুণ। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, দিনে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। এমনকি ছুটির দিনেও অজুহাত দেখিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকে, যা শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী এবং গৃহস্থালি ব্যবহারকারীদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা অভিযোগ করেছেন, কেবল নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নয়—পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা এবং তাদের একগুয়ে মনোভাবও এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। বক্তারা অভিযোগ করেন, কর্তৃপক্ষের বারবার আশ্বাস দেওয়ার পরও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এজন্য স্থানীয় ডিজিএমের অপসারণ দাবি করেন তারা।
সভায় বক্তব্য রাখেন কায়েতপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন, ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মামুন মিয়া, আনোয়ার হোসেন আনু, নাসির আহম্মেদসহ স্থানীয় কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। তারা জানান, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হলে শুধুমাত্র নতুন ট্রান্সফরমার বসানো নয়, বরং বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থাপনায় একগুচ্ছ সংস্কার প্রয়োজন।
এই পরিস্থিতি স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক উত্তাপও বাড়িয়ে তুলছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন এরইমধ্যে বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাওসহ আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নয়ন না হলে রূপগঞ্জে বড় ধরনের গণআন্দোলনের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সার্বিকভাবে, এই বিক্ষোভ কেবল রূপগঞ্জের সংকট নয়; এটি দেশের অনেক উপজেলার বিদ্যুৎ-ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার প্রতিফলন। স্থানীয় জনগণ এখন একটি প্রশ্নে একমত—“কর দিতে পারি, বিদ্যুৎ চাই নিরবচ্ছিন্নভাবে।” সরকারের এখন জরুরি ভিত্তিতে স্থানীয় সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানে এগিয়ে আসা দরকার, নইলে এই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে পারে আরও বিস্তৃত পরিসরে।