ঈদুল আজহা

ফিরতি পথে মাংস প্যাকেজিং করবেন যেভাবে

মাংস প্যাকেজিং পদ্ধতি।

মাংস প্যাকেজিং পদ্ধতি। ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক

পবিত্র ঈদ-উল-আজহায় কোরবানির পর অনেকেই গ্রামের বাড়ি থেকে মাংস নিয়ে ফেরেন রাজধানী বা অন্য শহরে। কিন্তু যাত্রাপথে এই কাঁচা মাংস পরিবহনে অনেকেই বিড়ম্বনায় পড়েন। বাস, ট্রেন বা লঞ্চে দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে গিয়ে দেখা যায় ব্যাগ থেকে পানি ঝরছে, দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, এমনকি অতিরিক্ত গরমে মাংস নষ্টও হয়ে যাচ্ছে। এসব সমস্যা এড়াতে সঠিক প্যাকেজিং এবং বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

মাংসে প্রাকৃতিকভাবেই ব্যাকটেরিয়া থাকে। ঠাণ্ডা না থাকলে, বিশেষ করে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায়, এসব ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে এবং মাংস পচতে শুরু করে। এছাড়াও, মাংস যদি পানিযুক্ত অবস্থায় প্যাক করা হয়, তাহলে তা আরও দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এসব বিড়ম্বনা এড়াতে চাই সঠিক প্যাকেজিং এবং একটু বাড়তি সতর্কতা।

নিরাপদে মাংস প্যাকেজিংয়ের ৮টি কার্যকরী উপায় রয়েছে। সেগুলো হলো-

১. রক্ত ও পানি ঝরিয়ে শুকনো করা: কোরবানির পর মাংস অন্তত ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা খোলা জায়গায় ছায়ায় রেখে দিন, যেন রক্ত ও অতিরিক্ত পানি ভালোভাবে ঝরে যায়। এতে মাংসের গঠন মজবুত হয় এবং এটি দীর্ঘক্ষণ ভালো থাকে।

২. ছোট ছোট ভাগে কাটা: মাংস বড় বড় চাকা আকারে থাকলে তা ভেতর পর্যন্ত ঠাণ্ডা হতে সময় নেয়। তাই ছোট ছোট টুকরায় কেটে নিলে তা সহজে ঠাণ্ডা হয় এবং সংরক্ষণের উপযোগী হয়।

৩. ফুড গ্রেড পলিপ্যাক বা জিপলক ব্যাগ ব্যবহার: সাধারণ বাজারের পলিব্যাগে মাংস রাখা ঠিক নয়। এর পরিবর্তে ফুড গ্রেড প্লাস্টিকের ব্যাগ, জিপলক ব্যাগ বা ভালো মানের ফুড কন্টেইনার ব্যবহার করুন। এতে মাংসের পানি বাইরে পড়বে না, দুর্গন্ধ ছড়াবে না এবং ব্যাগও পরিষ্কার থাকবে।

৪. ডিপ ফ্রিজে জমিয়ে নেয়া: যদি সময় থাকে, তাহলে গ্রামের বাড়িতে মাংস অন্তত ৮-১০ ঘণ্টা ডিপ ফ্রিজে রেখে একটু জমিয়ে নিন। হালকা ফ্রোজেন মাংস দীর্ঘ সময় নষ্ট না হয়ে থাকে। বিশেষ করে ১০-১২ ঘণ্টার বাস বা ট্রেন জার্নির জন্য এটি খুবই কার্যকর।

৫. কুলার ব্যাগ বা আইস বক্স ব্যবহার: শহরে ফেরার সময় সম্ভব হলে একটি আইস বক্স বা ইনসুলেটেড কুলার ব্যাগ ব্যবহার করুন। এর ভেতরে বরফ বা আইস জেল প্যাক দিয়ে মাংস রাখলে তা দীর্ঘ সময় ঠাণ্ডা থাকবে। এখন অনেক স্টেশনারি বা অনলাইন শপেই কম দামে এই ব্যাগগুলো পাওয়া যায়।

৬. পত্রিকা ও কাপড় দিয়ে মোড়ানো: যদি আইস বক্স সম্ভব না হয়, তাহলে পলিপ্যাকে প্যাক করার পর মাংস পত্রিকা ও পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মোড়ান। এতে বাইরের তাপ সরাসরি ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না এবং এক ধরনের ইনসুলেশন তৈরি হয়।

৭. আলাদা ব্যাগে রাখা: মাংসের ব্যাগ কখনো অন্য জিনিসের সাথে রাখবেন না। আলাদা ব্যাগ ব্যবহার করুন, যাতে কোনো রকম লিকেজ হলেও অন্যান্য জিনিসপত্রের ক্ষতি না হয়।

৮. বাস বা ট্রেনে ভ্রমণের সময় তাপমাত্রা বিবেচনা: যদি দিনের বেলা প্রচণ্ড রোদের সময় ভ্রমণ করতে হয়, তাহলে সম্ভব হলে মাংসের ব্যাগটি বাসের ভেতরে রাখার চেষ্টা করুন, ট্রেন হলে জানালার নিচে বা ঠান্ডা স্থানে রাখুন।

পৌঁছানোর পর করণীয়:

শহরে পৌঁছে মাংস প্রথমেই ফ্রিজে রাখুন। যদি মাংস একেবারে কাঁচা থেকে যায়, তাহলে কেটে, ধুয়ে ও ভাগ করে সংরক্ষণ করুন। দ্রুত রান্না করতে চাইলে ফ্রিজে, না হলে ডিপ ফ্রিজে বা ফ্রিজারে রাখুন।

ঈদের আনন্দ বাড়িয়ে তুলতে চাই সতর্কতা ও সচেতনতা। কোরবানির মাংস যদি সঠিকভাবে প্যাক করা না হয়, তাহলে তা শুধু আপনার নিজের জন্য নয়, পরিবহনযাত্রার সকলের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে। একটু বাড়তি প্রস্তুতিই পারে বড় ভোগান্তি থেকে রক্ষা করতে।

Leave a Reply

scroll to top