আসন্ন ঈদ-উল-আযহা সামনে রেখে কোরবানির পশু নির্বাচন নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। এর মধ্যে একটি সাধারণ প্রশ্ন হলো, শিংবিহীন গরু কোরবানি করা যাবে কিনা? ইসলামিক বিধান অনুযায়ী, শিংবিহীন গরু কোরবানি করা সম্পূর্ণরূপে জায়েজ, তবে কিছু শর্ত প্রযোজ্য।
ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী, ছয় ধরনের গবাদিপশু কোরবানি করা যায়। সেগুলো হলো- উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা। হরিণের মতো খাওয়া হালাল হলেও যেকোনো পশু কোরবানি করা যায় না। ছাগল, ভেড়া, ও দুম্বা শুধুমাত্র একজনের পক্ষ থেকে কোরবানি করা যায়। অন্যদিকে, উট, গরু, ও মহিষের কোরবানিতে সর্বোচ্চ সাতজন শরিক হতে পারে।
আমাদের দেশে গরু সবচেয়ে জনপ্রিয় কোরবানির পশু। কোরবানির জন্য গরু কেনার সময় এর সুস্থতা, সতেজতা ও ত্রুটিমুক্ত হওয়া অত্যন্ত জরুরি। মারাত্মক ত্রুটিযুক্ত বা দুর্বল ও অসুস্থ পশু দিয়ে কোরবানি শুদ্ধ হয় না। যেমন, যে গরু নিজে হেঁটে জবাইয়ের স্থানে যেতে পারে না, তা কোরবানি করা যাবে না।
শিংবিহীন গরুর বিধান
কোরবানির জন্য গরুর বয়স কমপক্ষে দুই বছর হওয়া আবশ্যক। এর চেয়ে কম বয়সী গরু দিয়ে কোরবানি শুদ্ধ হয় না, এমনকি শিং গজিয়ে গেলেও। তবে, কোরবানি শুদ্ধ হওয়ার জন্য গরুর শিং থাকা বা শিং ওঠা জরুরি নয়। দুই বছর বয়স হওয়ার পরও যদি কোনো গরুর শিং না ওঠে, তা দিয়ে কোরবানি করা সম্পূর্ণ জায়েজ। অর্থাৎ, শিংবিহীন গরুর বয়স দুই বছরের বেশি হলে তা কোরবানি করা যাবে।
তবে শিং ভাঙা গরুর ক্ষেত্রে বিধান ভিন্ন, সেক্ষেত্রে কোনো গরুর শিং যদি গোড়া থেকে ভেঙে যায় এবং এর ফলে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে সেটি গুরুতর ত্রুটি হিসেবে বিবেচিত হয় এবং ওই গরু দিয়ে কোরবানি শুদ্ধ হয় না। যদি শিং ভাঙার কারণে মস্তিষ্কে কোনো আঘাত না পৌঁছে, তাহলে ওই গরু কোরবানি করা জায়েজ। অর্ধেক শিং বা শিঙের কিছু অংশ ভেঙে গেছে এমন গরুও কোরবানি করা যাবে।
কোরবানির গুরুত্ব
কোরবানি ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা নামাজের সাথে কোরবানি করার নির্দেশ দিয়েছেন। সূরা কাওসারে বলা হয়েছে: “নিশ্চয় আমি তোমাকে কাওসার দান করেছি। সুতরাং তোমার রবের উদ্দেশে সালাত আদায় করো ও কোরবানি করো। নিশ্চয় তোমার প্রতি শত্রুতা পোষণকারীই নির্বংশ।” (সূরা কাওসার: ১-৩)
অন্য আয়াতে সূরা হজে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: “আর কোরবানির উটকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন বানিয়েছি; তোমাদের জন্য তাতে রয়েছে কল্যাণ। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান অবস্থায় সেগুলির উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর যখন সেগুলি কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তা থেকে খাও। যে অভাবী, মানুষের কাছে হাত পাতে না এবং যে অভাবী চেয়ে বেড়ায়-তাদেরকে খেতে দাও। এভাবেই আমি ওগুলিকে তোমাদের অনুগত করে দিয়েছি; যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। আল্লাহর কাছে পৌঁছে না এগুলোর গোশত ও রক্ত; বরং তার কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। এভাবেই তিনি সে সবকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর তাকবির পাঠ করতে পার, এজন্য যে, তিনি তোমাদেরকে হিদায়াত দান করেছেন; সুতরাং তুমি সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ দাও।” (সূরা হজ: ৩৬, ৩৭)
অতএব, শিংবিহীন গরু যদি কোরবানির অন্যান্য শর্ত, যেমন বয়স ও সুস্থতা পূরণ করে, তবে তা দিয়ে কোরবানি করা সম্পূর্ণ বৈধ। কোরবানির মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং তাকওয়া বা আল্লাহভীতি প্রদর্শন।