ইলিশের ভরা মৌসুম চললেও লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা পাচ্ছে না জেলেরা। দিনের পর দিন জাল ফেলেও আশানুরূপ মাছ না পাওয়ায় হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন প্রায় ৫২ হাজার জেলে এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল আড়তদারেরা। মাছঘাটগুলোতে নেই চিরচেনা সেই কর্মচাঞ্চল্য, আর বাজারে ইলিশের সরবরাহ প্রায় শূন্য। যাও দু-এক কেজি পাওয়া যাচ্ছে, তার দাম আকাশছোঁয়া।
ইলিশশূন্য মাছঘাট, বিপাকে জেলেরা
জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন লক্ষ্মীপুরের জেলেরা। এ জেলায় প্রায় ৫২ হাজার জেলে রয়েছেন, যার মধ্যে ৪২ হাজার নিবন্ধিত। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রায় ৩০টি মাছঘাটে দেখা যাচ্ছে চরম হতাশার চিত্র।
জেলেরা বলছেন, “নদীতে জাল ফেলেও প্রত্যাশিত ইলিশ মিলছে না। রোদ-বৃষ্টিতে কষ্ট করে নদীতে গেলে যে সামান্য মাছ পাওয়া যাচ্ছে, তাতে নৌকার জ্বালানি খরচও উঠছে না।” ফলে অনেকেই নদীতে যেতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
মজুচৌধুরীহাটের আড়তদার মিন্টু জানান, গত বছর এই সময়ে প্রতিদিন কয়েক টন ইলিশ আমদানি ও বিক্রি হতো। কিন্তু এবার মাছের আমদানি একেবারেই নেই। কোটি টাকার দাদন দিয়ে প্রস্তুত থাকলেও জেলেরা মাছ আনতে না পারায় তার টাকা আদায়ও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
আকাশছোঁয়া দাম, হতাশ ক্রেতারা
নদীতে ইলিশের সরবরাহ কম থাকায় বাজারে এর দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। বর্তমানে এক কেজি ওজনের ইলিশ ২৮০০ থেকে ৩০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মজুচৌধুরীহাটে মাছ কিনতে আসা সফিক উল্যাহ, রহমত উল্যাহ ও আবদুল খালেক জানান, এত বেশি দাম শুনে মাছ না কিনে খালি হাতেই বাড়ি ফিরে গেছেন তারা।
মৎস্য বিভাগের ব্যাখ্যা
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন এই পরিস্থিতির জন্য কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “নদীতে নাব্যসংকট এবং ডুবোচরের কারণে ইলিশ চলাচলে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। ইলিশ এখন গভীর সমুদ্রে চলে গেছে।” তবে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, “প্রচুর বৃষ্টি হলে এবং নদীতে পানির প্রবাহ বাড়লে ইলিশ ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মাস শেষের দিকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।”
চলতি মৌসুমে লক্ষ্মীপুর জেলায় ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। জেলে, আড়তদার এবং ক্রেতারা সবাই অধীর আগ্রহে মেঘনার বুকে ইলিশের ঝাঁকের অপেক্ষায় রয়েছেন।