মিরসরাইয়ে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জনজীবন বিপর্যস্ত

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক

টানা দুদিনের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। ঢলের তীব্র স্রোতে ভেঙে গেছে গ্রামীণ সড়কের বিস্তীর্ণ অংশ, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রোপা আমন ও সবজি খেত। এছাড়া, অসংখ্য মৎস্য প্রকল্প থেকে ভেসে গেছে মাছ, যা মৎস্যচাষিদের ব্যাপক ক্ষতির মুখে ফেলেছে।

উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট পৌরসভা, মিরসরাই পৌরসভার নিম্নাঞ্চল, জোরারগঞ্জ, ইছাখালী, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, খৈয়াছড়া, ওসমানপুর, সরকারতালুক, খিলমুরারী এবং ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের মধ্যম ওয়াহেদপুর ও দক্ষিণ ওয়াহেদপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। একাধিক স্থানে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে জোরারগঞ্জ-মুহুরীপ্রজেক্ট, জোরারগঞ্জ-আবুরহাট সড়ক এবং বড়দারোগাহাট-কমরআলী সড়ক চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা কলকারখানা, যেমন – সোনাপাহাড় এলাকার বিএসআরএম কারখানা, দক্ষিণ ওয়াহেদপুরের প্যারাগন ফিডমিল এবং ছদরমাদিঘী ও বড়কমলদহের সিপি বাংলাদেশ লিমিটেডের কারখানার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। মিরসরাই পৌরসভার মধ্যম মঘাদিয়া এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান জানান, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে তাদের এলাকা ডুবে যায়, ফলে রান্নাবান্না করাও কঠিন হয়ে পড়ে। সৈদালী এলাকার মোহাম্মদ মাসুদ অভিযোগ করেন, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে ওঠা ও খাল দখল করে স্থাপনা নির্মাণের কারণে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, যার ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই তাদের এলাকা ডুবে যায়।

মধ্যম ওয়াহেদপুরের বাসিন্দা সাহাব উদ্দিন জানান, পাহাড়ি ঢলে তাদের হাবিব উল্লাহ ভূঁইয়া সড়কের পূর্বপাশের প্রায় এক হাজার মিটার অংশ ভেঙে গেছে, যা ১৫ দিন আগে সংস্কার করা হয়েছিল। কাটাছড়া ইউনিয়নের মাওলানা শহীদুল ইসলাম বলেন, ভারি বর্ষণে জনগুরুত্বপূর্ণ জোরারগঞ্জ-আবুরহাট সড়ক ভেঙে খালে পড়েছে, যা মানুষের চলাচলে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে এবং দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন।

দুর্গাপুর ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের কৃষক জসীম উদ্দিন জানান, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তার প্রায় এক একর জমির রোপা আমন ধান তলিয়ে গেছে, যা তাকে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন করবে। মৎস্যচাষি ইকবাল হোসেন বলেন, ইছাখালীতে কয়েকটি মৎস্য প্রকল্প থেকে পানির সাথে মাছ ভেসে গেছে।

মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে রোপা আমন এবং সবজি খেতের কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। এখনো ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, মৎস্য প্রকল্পগুলোর পাড় নিচু হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই পানি বাইরে চলে যায়। টানা বৃষ্টির কারণে মৎস্যচাষিদের ক্ষতি হতে পারে, তবে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেলে ক্ষতির পরিমাণ কমে আসবে।

Leave a Reply

scroll to top