দেশের ওপর দিয়ে বয়ে চলা তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত। আজ শনিবার রাজধানী ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চলতি বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তবে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়—৩৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
৪৫ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের ৪৫টি জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জেলা ও অঞ্চলগুলো হলো: রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, বরিশাল, পটুয়াখালী, ঢাকার ১৩ জেলা, খুলনার ১০ জেলা ও রাজশাহীর ৮ জেলা।
আবহাওয়াবিদদের মতে, তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রি হলে মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং ৪০ থেকে ৪১.৯ ডিগ্রি হলে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে গণ্য হয়। চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৩৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছানোর ফলে স্থানীয়দের জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকায় গরমের অনুভূতি আরও তীব্র হচ্ছে।
আগামী কয়েকদিনের আবহওয়া
আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই তাপপ্রবাহ আগামী তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে। তবে আগামী রোববার থেকে দেশের কিছু অঞ্চলে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, যা তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস করতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জনসাধারণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তিদের অতিরিক্ত গরমে বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত পানি পান, হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান এবং দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত রোদ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সার্বিকভাবে, দেশের বর্তমান আবহাওয়া পরিস্থিতি জনজীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাই সকলকে সতর্ক থাকার এবং প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
চলতি বছরের রেকর্ড তাপমাত্রা
এর আগে শুক্রবার রাজধানী ঢাকায় রেকর্ড করা হয়েছে চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা—৩৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এটি স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৫ ডিগ্রি বেশি। ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাজশাহী, যশোর, খুলনা, রংপুর ও সিলেটেও তাপমাত্রা ৩৭ থেকে ৪০ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে।
আবহাওয়াবিদদের ভাষ্য অনুযায়ী, এই তাপপ্রবাহকে ‘মাঝারি থেকে তীব্র’ ক্যাটাগরিতে ফেলা হচ্ছে। রাজধানীতে সকাল থেকেই রাস্তাঘাট ফাঁকা দেখা গেছে, বিশেষ করে দুপুরের দিকে মানুষ ঘর থেকে বের হতে কুণ্ঠাবোধ করেছে। খোলা রাস্তায় চলাচলকারী রিকশাচালক, শ্রমিক ও নিম্নআয়ের মানুষজন সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। বিভিন্ন হাসপাতালে হিট স্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন ও মাথাব্যথা নিয়ে রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, “এই গরমে যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাদের বিশেষভাবে সাবধান থাকতে হবে।” তিনি আরও বলেন, প্রচুর পানি ও পানীয় খাবার, ফলমূল খাওয়া এবং দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত রোদ এড়িয়ে চলা উচিত।