দেশজুড়ে অসহনীয় তাপপ্রবাহ চলছে। কোথাও কোথাও দিনের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি পৌঁছেছে। এই তীব্র গরমে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও। চিকিৎসকেরা বলছেন, এই সময় সবচেয়ে বেশি সচেতন থাকা দরকার ‘হিট স্ট্রোক’ এবং ‘হিট ক্র্যাম্প’ নিয়ে। কারণ, এই দুই সমস্যাই হতে পারে জীবনঝুঁকির কারণ।
হিট স্ট্রোক:
বিশেষজ্ঞদের মতে, হিট স্ট্রোক হলো তাপজনিত অসুস্থতার মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক। এটি এক ধরনের মেডিক্যাল ইমারজেন্সি। যখন শরীর স্বাভাবিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয় এবং অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট (প্রায় ৩৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা তার বেশি হয়ে যায়, তখন হিট স্ট্রোক ঘটে। এতে বিভ্রান্তি, খিঁচুনি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, যাদের বয়স বেশি, যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদ্রোগ আছে, শিশু এবং যারা রোদে বা বাইরে দীর্ঘ সময় কাজ করেন—তাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
হিট স্ট্রোকের উপসর্গ:
- শরীরের তাপমাত্রা ১০৩°F বা তার বেশি
- তীব্র মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরা
- বিভ্রান্তি বা অসংলগ্ন কথা বলা
- খিঁচুনি বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
- ঘাম বন্ধ হয়ে যাওয়া, ত্বক শুকনো হয়ে যাওয়া
প্রথম করণীয়:
রোগীকে দ্রুত ছায়াযুক্ত বা শীতল স্থানে নিয়ে যান। ঠান্ডা পানি দিয়ে শরীর মুছিয়ে দিন, কপালে বরফ বা ঠান্ডা প্যাক দিন। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। দেরি করলে তা মারাত্মক রূপ নিতে পারে।
হিট ক্র্যাম্প:
তবে শুধু হিট স্ট্রোক নয়, গরমে আরেকটি সমস্যা দেখা দিচ্ছে—‘হিট ক্র্যাম্প’। চিকিৎসকদের মতে, এটি হলো পেশির তীব্র খিঁচুনি, যা সাধারণত পা, হাত, পেট বা পিঠের পেশিতে হয়। অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীর থেকে পানি ও লবণ (ইলেক্ট্রোলাইট) বেরিয়ে গেলে এ সমস্যা দেখা দেয়।
হিট ক্র্যাম্পের লক্ষণ:
- পেশিতে হঠাৎ তীব্র ব্যথা
- চলাফেরায় অস্বস্তি বা সীমাবদ্ধতা
- ঘাম ঝরতে থাকা সত্ত্বেও দুর্বলতা অনুভব
- ক্লান্তি ও বমি বমি ভাব
কী করবেন?
হিট ক্র্যাম্প দেখা দিলে প্রথমেই কাজ বন্ধ করে বিশ্রাম নিন। ছায়াযুক্ত বা শীতল পরিবেশে চলে যান। প্রচুর পানি, স্যালাইন বা ইলেক্ট্রোলাইটযুক্ত তরল পান করুন। আক্রান্ত পেশিকে ধীরে ধীরে টান দিয়ে স্ট্রেচ করুন এবং প্রয়োজনে ঠান্ডা পানি বা বরফ সেক দিন।
যদি খিঁচুনি দীর্ঘস্থায়ী হয়, শরীরে দুর্বলতা বাড়ে, বমি শুরু হয় বা মাথা ঘোরে— তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অনেক সময় হিট ক্র্যাম্পই হিট স্ট্রোকের পূর্বাভাস হিসেবে দেখা দেয়।
প্রতিরোধেই করণীয়
- দিনে অন্তত ৩-৪ লিটার পানি পান করুন
- বাইরে গেলে হালকা, ঢিলেঢালা ও হালকা রঙের পোশাক পরুন
- টুপি, ছাতা ও সানগ্লাস ব্যবহার করুন
- দুপুর ১২টা থেকে ৩টার মধ্যে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন
- স্যালাইন বা ওআরএস সঙ্গে রাখুন
চিকিৎসকেরা বলছেন, তাপমাত্রা বাড়বে, তবে সচেতনতা ও প্রস্তুতি থাকলে ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। তীব্র গরমে শুধু অসুস্থতাই নয়, প্রাণহানিও হতে পারে—এমনটা যেন না ঘটে, সে জন্য সাবধান থাকতে হবে সবাইকে।
তথ্যসূত্র: চিকিৎসক সাক্ষাৎকার, স্বাস্থ্য অধিদফতর, আবহাওয়া অধিদফতর