জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে দুটি পৃথক বিভাগ—রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ—গঠনের সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করেছে সরকার। মঙ্গলবার (১৩ মে) বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের পাঠানো এক বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব কমানো, করভিত্তি সম্প্রসারণ এবং কর প্রশাসন থেকে নীতি নির্ধারণকে পৃথক করার প্রয়োজনে এনবিআর বিলুপ্ত করা হয়েছে।
৫০ বছরের পুরনো কাঠামোর সীমাবদ্ধতা
সরকার জানায়, ৫০ বছরের বেশি সময় আগে গঠিত এনবিআর ধারাবাহিকভাবে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত মাত্র ৭.৪%, যা এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। বিশ্বব্যাপী গড় অনুপাত ১৬.৬%, আর মালয়েশিয়ায় এটি ১১.৬%। উন্নয়নের চাহিদা পূরণে বাংলাদেশকে অন্তত ১০% কর-জিডিপি অনুপাতে পৌঁছাতে হবে—যার জন্য এনবিআর পুনর্গঠন অত্যাবশ্যক।
পুরনো কাঠামোর সমস্যাসমূহ:
স্বার্থের দ্বন্দ্ব
নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়ন এক কাঠামোয় থাকায় জবাবদিহির অভাব, অনিয়ম ও যোগসাজশের সুযোগ তৈরি হয়েছে। কর কর্মকর্তারা প্রভাবশালী কর ফাঁকি দাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনিচ্ছুক।
অদক্ষ রাজস্ব সংগ্রহ
দ্বৈত দায়িত্ব পালনে মনোযোগ বিভক্ত হওয়ায় করজাল সংকীর্ণ ও রাজস্ব আহরণ অনুপাত তুলনামূলক কম।
দুর্বল শাসনব্যবস্থা
এনবিআরের অসংগত নীতি প্রয়োগ এবং পদ্ধতিগত দুর্বলতা বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীন করে তোলে।
আমলাতান্ত্রিক ওভারল্যাপ
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রধান ও এনবিআরের নেতৃত্ব একই ব্যক্তির হাতে থাকায় বিভ্রান্তি ও অদক্ষতা সৃষ্টি হয়েছে।
নৈতিক সংকট ও কর্মীদের অসন্তোষ
সংস্কার নিয়ে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের মধ্যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যারা মনে করছেন তাদের উপেক্ষা করা হতে পারে।
নতুন কাঠামোর মাধ্যমে যেভাবে সমাধান হবে:
দায়িত্বের স্পষ্ট বিভাজন:
রাজস্ব নীতি বিভাগ কর আইন প্রণয়ন, হার নির্ধারণ ও আন্তর্জাতিক চুক্তি দেখভাল করবে; আর রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ বাস্তবায়ন ও নিরীক্ষার দায়িত্ব পালন করবে।
দক্ষতা ও শাসনব্যবস্থার উন্নয়ন:
প্রত্যেক বিভাগ তার নির্দিষ্ট কার্যক্রমে মনোনিবেশ করতে পারবে, ফলে স্বার্থের দ্বন্দ্ব ও অখণ্ডতার সংকট দূর হবে।
করজাল সম্প্রসারণ ও প্রত্যক্ষ করের গুরুত্ব বৃদ্ধি:
পরোক্ষ কর নির্ভরতা কমিয়ে দক্ষ পেশাজীবীদের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ কর আদায়ে জোর দেওয়া হবে।
প্রমাণভিত্তিক নীতিনির্ধারণ:
স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্যে নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নমূলক কর কৌশল গঠনে মনোযোগ দেওয়া হবে।
বিনিয়োগে আস্থা বৃদ্ধি:
স্বচ্ছ, পূর্বানুমানযোগ্য নীতি ও পেশাদার প্রশাসনের মাধ্যমে বেসরকারি খাতে আস্থা বাড়বে।