বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের বেইস ক্রিক-১ এলাকায় নোঙর করা বাংলাদেশি পতাকাবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ ‘এমভি সেজুতি’ থেকে লুট হওয়া গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ মে) গভীর রাতে জাহাজটিতে সশস্ত্র ডাকাতির ঘটনা ঘটে। কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন্স কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবরার হাসান জানান, রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টায় স্থানীয় দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রধারী প্রায় ১২ জন দুষ্কৃতকারী জাহাজে প্রবেশ করে। তারা জাহাজের নাবিকদের জিম্মি করে ইঞ্জিন রুম থেকে বিভিন্ন ধরনের স্পেয়ার পার্টস, ব্যাটারি, চার্জার এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ লুট করে পালিয়ে যায়।
ঘটনার পরপরই কোস্টগার্ডের একটি বিশেষ টিম অভিযান চালিয়ে মোংলার বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালায়। অভিযানে উদ্ধার হয় ডাকাতির শিকার যন্ত্রাংশ, এবং তিনজন সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়।
তদন্তে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য
ঘটনাটির তদন্তে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। কোস্টগার্ড জানায়, প্রাথমিকভাবে ডাকাতি হিসেবে শুরু হলেও তদন্তে ইঙ্গিত মিলেছে এটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত একটি ‘সাজানো ডাকাতি’। জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ও কয়েকজন নাবিক স্থানীয় একটি চক্রের সঙ্গে সমন্বয় করে ঘটনাটি ঘটায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ‘এমভি সেজুতি’ জাহাজের অধিকাংশ নাবিক দীর্ঘ ৬-৭ মাস ধরে নিয়মিত বেতন পাচ্ছিলেন না। এতে তারা মালিক পক্ষের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। সেই ক্ষোভ থেকেই নাবিকদের একটি অংশ স্থানীয় অপরাধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ধাপে ধাপে যন্ত্রাংশ বিক্রি করছিল। এবারের ঘটনা সেই ধারাবাহিকতারই একটি বড় পর্ব ছিল বলে তদন্তকারীদের ধারণা।
গ্রেফতার হওয়া তিনজন জানায়, চিফ ইঞ্জিনিয়ারের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এই ‘ডাকাতির নাটক’ সাজানো হয়। উদ্দেশ্য ছিল জাহাজের যন্ত্রাংশ বিক্রি করে অর্থ ভাগাভাগি করা।
দুঃখজনকভাবে, ঘটনার পর কোস্টগার্ড জাহাজের মালিক পক্ষকে সহায়তা চেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানালেও মালিক প্রতিনিধি ক্যাপ্টেন সাহিকুল তা প্রত্যাখ্যান করেন বলে জানানো হয়।
বর্তমানে উদ্ধার হওয়া মালামাল জাহাজ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। আটক ব্যক্তিদের থানায় সোপর্দ করার কার্যক্রমও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
কোস্টগার্ড সূত্র জানিয়েছে, জাহাজ কর্তৃপক্ষের দায় ও নাবিকদের বকেয়া বেতন সংক্রান্ত বিষয়সহ পুরো ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রয়োজন। এছাড়া ঘটনার প্রকৃত রূপ আড়াল করতে কিছু সংবাদ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে, যা তদন্ত সাপেক্ষে যাচাইয়ের দাবি রাখে।