ইংল্যান্ড থেকে লাহোর, ট্রেন্ট ব্রিজ থেকে গাদ্দাফি– রাজার এক অসম্ভব সফরের গল্প

New-Project-11-9.jpg

জয়ের পর সিকান্দার রাজাকে কাঁধে তুলে নেন লাহোর কালান্দার্সের খেলোয়াড়রা

২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ স্পোর্টস ডেস্ক

শনিবার সন্ধ্যায় ট্রেন্ট ব্রিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে আউট হয়ে ফিরছিলেন সিকান্দার রাজা। তার সতীর্থরা ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়ের হতাশা নিয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরলেও, রাজার জন্য তখনো সব শুরুই হয়নি।

কারণ, পরদিনই তার ফ্র্যাঞ্চাইজি দল লাহোর কালান্দার্স খেলবে পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) এর ফাইনাল।

এক সপ্তাহ আগেই তিনি ইংল্যান্ড থেকে উড়ে এসে কালান্দার্সকে নকআউটে তুলেছিলেন, পরদিনই আবার জাতীয় দলের হয়ে খেলতে ফিরে যান। এবারের ফাইনালেও এমনই এক অবিশ্বাস্য সফর শুরু করলেন তিনি—জীবনের, ক্রিকেটের, এবং দায়বদ্ধতার এক অনন্য নিদর্শন রেখে।

বিমানে সিট নেই? সমস্যা নয়!

টেস্ট ম্যাচ শেষ হতেই রাজা ছুটে যান বার্মিংহামের দিকে, বন্ধুর গাড়িতে। সেখান থেকেই ধরেন দুবাইগামী ফ্লাইট। বিজনেস ক্লাস না পাওয়ায় ইকোনমি ক্লাসেই চেপে বসেন।
দুবাই পৌঁছানোর পর ৬ ঘণ্টার লে-ওভার, এরপর গাড়িতে চেপে আবুধাবি গিয়ে লাহোরের ফ্লাইট ধরেন।

এই দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তি তখনো কাটেনি, যখন ম্যাচের টস চলছিল। সেখানেই অধিনায়ক শাহিন আফ্রিদি ঘোষণা করেন—সিকান্দার রাজা আছেন একাদশে।

রাজা ম্যাচ শেষে বলেন, “আমি এখানে এসেছি একটা কাজ করতে। যদি হেরে যেতাম, অন্তত এটুকু জানতাম—আমি আমার ভাইদের সঙ্গে ছিলাম।”

তিনি আরও যোগ করেন, “পরশুদিন ২৫ ওভার বল করেছি, গতকাল ২০ ওভার ব্যাট করেছি। রাতের খাবার খেয়েছি বার্মিংহামে, সকালের খাবার দুবাইয়ে, দুপুরে আবুধাবিতে, রাতের খাবার লাহোরে। এটাই হয়তো পেশাদার ক্রিকেটারের জীবন, এবং আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ।”

নাটকের সূচনা: রাজা এলেন, দেখলেন, জয় করলেন

বল হাতে এসেই দ্বিতীয় ডেলিভারিতে ফিরিয়ে দেন রাইলি রুশোকে। কিন্তু মূল নাটক রচিত হয় ব্যাট হাতে।

কালান্দার্স তখন চাপে—২০ বলে দরকার ৫৭ রান। মোহাম্মদ আমির তখন তার অভিজ্ঞতা দিয়ে ম্যাচ হাতের মুঠোয় আনতে চাচ্ছেন। এমন সময় ক্রিজে আসেন রাজা। প্রথম বলে মিডউইকেটে চার, পরের বলে ওভার দ্য টপ ছক্কা।

রাজা জানান, “মাথা একদম ফাঁকা ছিল। ক্লান্তি এমন পর্যায়ে যে কোনো ভাবনা কাজ করছিল না। শুধু বল দেখেছি, আর ব্যাট চালিয়েছি।”

শেষ তিন বলে দরকার ছিল ৮ রান

শেষ ওভারে আবার চাপ। ফাহিম আশরাফ বল হাতে, রাজা স্ট্রাইকে। তিন বলে দরকার ৮ রান। প্রথম বলেই দুর্দান্ত কভার পয়েন্টের ওপর দিয়ে ছক্কা! পরের বল ইয়র্কার মিস— মিডউইকেটে চার। ম্যাচ শেষ, আতশবাজির ঝলকানি গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে। সতীর্থরা রাজাকে কাঁধে তুলে নেন।

রাজা বলেন, “এই জয়টা অন্যরকম। তিনটা নকআউট খেলেছি, প্রতিটা ম্যাচেই টানটান উত্তেজনা। কিন্তু এই ম্যাচ—এত নাটক, এত পথ পাড়ি দিয়ে এই জয়—সত্যিই অবিশ্বাস্য।”

রাজা যা করলেন, তার জন্য শব্দ প্রয়োজন হয় না

সত্যিই, এমন গল্প হয়তো সিনেমার পর্দায় মানায়। কিন্তু সিকান্দার রাজা সেটা বাস্তব করে দেখিয়েছেন—একজন জাত ক্রিকেটার কীভাবে পেশাদারিত্ব, দায়বদ্ধতা ও হৃদয়ের সমন্বয়ে ইতিহাস রচনা করেন, তার এক অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবেন তিনি।

Leave a Reply

scroll to top