টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) বিপক্ষে সিরিজ দিয়েই গ্রীষ্মকালীন টি-টোয়েন্টি অভিযানে নেমেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তিন ম্যাচের এই সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হার তাদের যাত্রার শুরুতেই বড় ধাক্কা দিল। শারজায় তিন ম্যাচেই পিছিয়ে পড়ার একাধিক কারণ এখন বাংলাদেশ দলের সামনে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভুল লেন্থে বোলিং, দাপট দেখিয়েছে ইউএই ব্যাটাররা
বাংলাদেশের বোলাররা তাদের পরিকল্পনায় ভুল করায় ইউএই ব্যাটাররা খোলা মনে শট খেলেছে। সিরিজে বাংলাদেশের চেয়ে ইউএই কম ছক্কা মারলেও চার বেশি মেরেছে এবং সেগুলোর টাইমিং ছিল দারুণ। প্রতিবারই তারা রান তাড়ায় নেমে চাপমুক্ত অবস্থায় বড় শট খেলেছে।
বিশেষ করে স্পিনার মাহেদী হাসান ও তানভীর ইসলাম, উইকেটের বাইরে বল ফেলে মোহাম্মদ ওয়াসিম ও আসিফ খানের মতো পাওয়ার হিটারদের লেগ সাইডে বড় শট খেলার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। ফাস্ট বোলাররাও ছিলেন যথেষ্ট অগোছালো—নাহিদ রানা ও হাসান মাহমুদ অনেক বেশি ওয়াইড অথবা শর্ট বল করেছেন। বল ধরতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তানজিম হাসান সাকিব। আর শরিফুল ইসলাম প্রথম দুই ম্যাচে ভালো শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত ছন্দ হারিয়েছেন।
যেটা মানিয়ে নিয়েছে ইউএই, সেটা নিয়েই অভিযোগ বাংলাদেশের
তৃতীয় টি-টোয়েন্টির পর ইউএইর হায়দার আলী জানান, তারা অনুশীলনে ভেজা বলেই বোলিং করেন যেন ম্যাচে শারজার নিয়মিত শিশিরের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশের অধিনায়ক লিটন দাস তিন ম্যাচেই শিশির নিয়ে অভিযোগ করেছেন। উপমহাদেশে শিশির একটি সাধারণ ব্যাপার হলেও সেটার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার বদলে অভিযোগ করে খুব একটা লাভ হয়নি।
অথচ মাত্র কয়েক মাস আগেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশ ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছিল, যেখানে শিশির ছিল না। আর ম্যাচগুলোও ছিল কম স্কোরিং (১৪০-১৫০ রানের)। সেখানে স্পিনাররা রাতের আলোতেও ভালো বল করেছিলেন। শারজায় সেই সামঞ্জস্যটা ছিল না।
ব্যাটিংয়ে ছিল না ধারাবাহিকতা
বাংলাদেশ দল ১৯১ ও ২০৫ রানের মতো বড় স্কোর তুললেও ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতা ছিল না। দুই ওপেনার একটা শক্ত ভিত্তি গড়ার প্রয়াশ চালিয়েছিলেন বটে তবে পরের ব্যাটাররা সেটা ধরে রাখতে পারেনি বরাবরের মতোই। প্রথম ম্যাচে শতক হাঁকিয়েচিলেন পারভেজ হোসেন ইমন, সাথে ভালো সূচনা করেছিলেন অপর ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম।কিন্তু সেই মিডল অর্ডারে ছিল ভরাডুবি। লিটন দাস ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরলেও তৃতীয় ম্যাচে বিপর্যয়ের সময় হাল ধরার জায়গায় হতাশ করেছেন তৌহিদ হৃদয়।
যদিও নাজমুল হোসেন শান্তকে একমাত্র দ্বিতীয় ম্যাচেই সুযোগ দেওয়া হয়েছিল তবে খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারননি ওয়ানডে অধিনায়ক। জাকের আলী শেষ ম্যাচে ভালো খেললেও মাহেদী ও শামিম হোসেনদের কাছ থেকে দলের চাহিদা অনুযায়ী কিছু আসেনি।
মুস্তাফিজের অনুপস্থিতি বড় ধাক্কা
সিরিজ শুরুর আগেই এক ধরণের বিভ্রান্তি তৈরি হয় মুস্তাফিজুর রহমানকে ঘিরে। দিল্লি ক্যাপিটালস তাকে আইপিএলে যোগ দেওয়ার কথা জানালেও বিসিবি বলেছিল, তারা এনওসি দেয়নি। পরে প্রথম ম্যাচে খেলে আইপিএলে যোগ দেন মুস্তাফিজ, যেখানে তিনি ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে একমাত্র জয় এনে দিয়েছিলেন।
তার অনুপস্থিতিতে পরবর্তী দুটি ম্যাচে বাংলাদেশ বোলিং আক্রমণ পুরোপুরি দুর্বল হয়ে পড়ে, আর ইউএই সেটার সুযোগ নেয় ভালোভাবে।
পাকিস্তান সিরিজের আগে মানসিক চাপে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ এই সিরিজটিকে পাকিস্তান সফরের প্রস্তুতি হিসেবে দেখছিল। কিন্তু ১৫ নম্বরে থাকা ইউএইর কাছে হার এখন দলের আত্মবিশ্বাসে বড় চোট দিয়েছে। এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সিরিজ হারায় সমালোচনার মুখে পড়েছিল দলটি। এবার ইউএইর বিপক্ষে আবারও খেলোয়াড়দের ম্যাচের পরিস্থিতি বোঝার অভাব চোখে পড়েছে।
এরপর তাদের সামনে পাকিস্তান, সেটিও আবার প্রতিপক্ষের ঘরের মাঠে। এই চাপ সামলে নিজেদের নতুন করে গুছিয়ে তুলতে না পারলে আরও কঠিন সময় অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য।
তথ্যসূত্র: ইএসপিএনক্রিকইনফো