বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) বরিশাল জেলা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপমহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলামের ছত্রছাত্রায় বেপোরায়া বিসিকের সহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান। ঘুষ বাণিজ্য, পদায়নবদলি, জাল মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরিসহ এমন কোন অপকর্ম নেই , যা প্রকৌশলী কামরুজ্জামানের অভিধানেনেই। এ যেন ধরাকে সরা ঞ্জান করার মতো অবস্থা।
নিয়ম অনিয়নের দোলাচলে নজরুলের ছত্রছায়ায় বোপোয়ারা কামরুল। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের রেজিমে পুরোবিসিকে নিয়েছিলেন একক নিয়ন্ত্রণ। নিজ জেলা ফরিদপুরেও ছিল তার বেশুমার দাপট। কামরুলের দাপটেরীতিসিদ্ধ তটস্থ থাকতেন ফরিদপুর বিসিকের কর্তাব্যক্তিরা। সাবেক কর্মস্থল মাদারীপুর বিসিক শিল্পনগরী ছিলো হেরেমখানা। যা এই প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানিয়েছে তৎকালীন সময়ে বরিশাল বিসিকে কর্মরত থাকাকর্তাব্যক্তিদের কয়েকজন। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।
কালের আবর্তে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে সহকারী প্রকৌশলী হয়েছেন কামরুজ্জামান। চাকুরির গ্রেড যা হোকবিসিকের বরিশাল জেলা কার্যালয়ের ইটপাটকেল থেকে ঠিকাদার সবাই জানে তিনিই ‘ছায়া উপমহাব্যবস্থাপক ’।
কারণ এ বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলামের আলো–অন্ধকারের সুকর্ম–কুকর্মের রাজসাক্ষী তিনিই।কখনো ঘটনার সহযোগী, কখনো অঘটনের উপাদান সরবরাহকারী আবার কখনো দুয়েমিলে করেছেনকু–কর্মগুলো। ফলে তার কব্জাতেই অফিসের প্রধান কর্তাটি। কর্মস্থল আর নিয়ন্ত্রণ অফিসে তার আধিপত্যটাওগড়ে উঠেছে অপ্রতিরোধ্য।
প্রকৌশলী কামরুলের দুর্নীতি অনিয়ম, কমিশন বাণিজ্য, নিয়োগ তদবির ও পার্টনারে ঠিকাদারিসহ নানা অপকর্মকরে তিনি এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। দুদকের জাল ভেদ করতে নামে বেনামে জমি, বাড়ি, ব্যবসাবাণিজ্যসহ বিপুল অর্থ সম্পদ গড়ে তুলছেন তিনি।তার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের হিসাব বেশকটি ব্যাংকেখতিয়ে দেখলেই প্রমাণ মিলবে।
স ম্প্রতি ‘ভুয়া’ মুক্তিযোদ্ধা সনদে বিসিকে চাকরি! “ সহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামানের শত কোটি টাকারদুর্নীতির ” এই শিরোনামে দেশের একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও নজরুলের ছত্রছাত্রায়া থাকায়, কোনব্যবস্থা নেয়নি বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)।
এদিকে এবিষয়ে মুঠোফোনে কথা হয় বরিশাল বিসিকের ভারপ্রাপ্ত উপমহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলামের সাথে। তিনি এই প্রতিবেদনকে বলেন,
ভাই কামরুল সাহেব আমাকে বিষয়গুলো জানিয়েছে। তার বাড়িতে জায়গা জমি নিয়ে ঝামেলা সাংবাদিকরাফোন করছে। কিন্তু নিয়োগ ,বদলি, পদায়ন এগুলো তো অফিসের বিষয়। আর কার কি সম্পত্তি আছে এগুলোতো আমি জানি না।
উল্লেখ্য, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরি নেয়াসহ নানান অভিযোগে ফরিদপুরে আলোচিত বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) বরিশাল জেলা কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী এ.কে.এম কামরুজ্জামান (সবুজ)। চাকরি করতে গিয়ে আলাদ্দিনের চেরাগ হাতে পেয়েছেন বলে খবর প্রকাশ হয়েছে।
এ.কে.এম কামরুজ্জামানের বাড়ি ফরিদপুর সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড এর জ্ঞানদিয়াগ্রামে।
এ.কে.এম কামরুজ্জামান (সবুজ) ওই গ্রামের মৃত ইমারত হোসেন মোল্লার ছেলে। যার মুক্তিযোদ্ধার সনদ কোটায়এ.কে.এম কামরুজ্জামান সরকারী চাকরি নিয়েছেন। কিন্তু ইমারত হোসেন মোল্লার এই মুক্তিযোদ্ধার সনদেরসত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। এদিকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়েরগেজেটভুক্ত–মুক্তিযোদ্ধাদের–তালিকায় ইমারত হোসেন মোল্লার নাম থাকলেও এলাকার অনেকে বলছেন, এইসার্টিফিকেট ভুয়া। আওয়ামী কানেকশন ব্যবহার করে এই সার্টিফিকেট জোগাড় করেছেন তিনি। মূলত ইমারতহোসেন মুক্তিযুদ্ধ করেন নাই।
তবে মাত্র চাকরি পাওয়ার কয়েক বছরেই কামরুজ্জামান কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন বলে অভিযোগকরেছেন অনেকেই। কিন্তু কিভাবে একজন দ্বিতীয় শ্রেনীর কর্মকর্তা এত অল্প সময়ে অঢেল সম্পদের মালিক হতেপারেন সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে।
এ বিষয়ে কামরুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি জ্ঞানদিয়া গ্রামের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তেবলেন, “কামরুজ্জামানের বাবা নিজের জমি–জমা দেখাশোনা করেই পারিবারিক খরচ মেটাতেন। এর বাইরেতাদের বড় কোনো উপার্জন আছে বলে আমার জানা নেই। তবে তিন–চার বছর আগে তিনি (কামরুজ্জামান) ফরিদপুর শহরের বেশ কয়েটি এলাকায় কয়েক কোটি টাকার জমি ক্রয় করেছে বলে শুনেছি। এছাড়া তার নামেশহরে ফ্লাট রয়েছে বলেও শুনেছি। ”
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সূত্রে কামরুজ্জামান এর দূনীতি বিষয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পকরপোরেশন (বিসিক) বরিশাল জেলা কার্যলয়ের সহকারী প্রকৌশলী এ.কে.এম কামরুজ্জামান সীমাহীনদুর্নীতির মাধ্যমে ঠিকাদারদের হয়রানি, আত্মীয় স্বজনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি ব্যবসা, নিয়োগ, তদবির, বদলি বাণিজ্য এবং বিগত আওয়ামীলীগের বিভিন্ন নেতার নাম ভাঙিয়ে তার বিরুদ্ধে শত কোটি টাকাআত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও ঠিকাদারদের হয়রানির অভিযোগ তদন্ত করছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ওকুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা হচ্ছে বলে জানাগেছে ।
ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতির টাকায় উত্তরা ও পূর্বাচলে স্ত্রী, শ্বশুর–শাশুড়ী ও আত্মীয়দের নামে প্লট ওফ্লাট কিনেছেন কামরুজ্জামান। দুর্নীতির টাকা বৈধ করতে দেশের বাড়ি ফরিদপুরে ডেইরী ফার্ম, পোল্ট্রি ফার্ম’রব্যবসা করছেন। নিজ এলাকা ও শ্বশুরবাড়িতে কয়েক বিঘা জমি কিনেছেন অল্প সময়ের মধ্যে। ফরিদপুর শহর ওতার আশেপাশে রয়েছে তার স্ত্রী ও শশুরবাড়ির লোকজনের নামে কয়েকটি প্লট ও বাড়ি।
মাদারীপুরের এক ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেন, মাদারীপুর নতুন বিসিক এরিয়ার বিভিন্ন কাজে রিভাইজকরিয়ে ঠিকাদারদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কামরুজ্জামান। অর্থ হাতিয়ে নেওয়ারকৌশল হিসেবে সাবেক নৌ মন্ত্রী শাজাহান খান, তার ছেলে আসিব খান, মন্ত্রীর ভাই যাচ্চু খানের বন্ধু , সাবেকবিসিক প্রধান প্রকৌশলী ও সেনাবাহিনীর কয়েকজন মেজর জেনারেলের নাম ভাঙিয়েছেন তিনি।
অভিযোগে জানা গেছে, মাদারীপুর বিসিক নগর তৈরির সময় শাজাহান খানের ভাইয়ের সার্বির ইন্টারন্যাশনালএর সাথে যোগসাজসে আড়িয়াল খাঁ নদী থেকে বালু তুলে ভরাট, ভিম, কলাম, ছাদের ঢালাই কম ও রডেরপরিমাণও কম দেয়া হয়েছে।
এসব কাজে রাষ্ট্রকে ফাঁকি দিয়ে ঠিকাদারদের সাথে সরকারি অর্থ ভাগাভাগি করেছেন কামরুজ্জামান। এছাড়াশাজাহান খানের চাচাতো ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শফিক খান ছিলেন তার রাতের পাটনার। শফিকখান বিভিন্ন জনকে হাসির ছলে বলতেন তারা দুইজন গ্লাস ও নারীর পার্টনার।
এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে এ.কে.এম কামরুজ্জামানের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি সব অভিযোগঅস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, তিনি ষড়যন্ত্রের স্বীকার।
এ.কে.এম কামরুজ্জামান বলেন, ‘পারিবারিক শত্রুতার জেরে আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে।উত্থিত অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই।’
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেটে চাকরি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি জানি আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।গেজেটে বাবার নাম কবে উঠেছে, তা আমার জানা নেই।’