সিরিয়ার অর্থনীতি পুনরুজ্জীবনে সহায়তার জন্য দেশটির ওপর থেকে সব ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গতকাল মঙ্গলবার (২০ মে) এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, যা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির দীর্ঘদিনের সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিন ইইউ-এর পররাষ্ট্র নীতি প্রধান কায়া ক্যালাস পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের বৈঠক শেষে দৃঢ় কণ্ঠে সিরিয়ার জনগণের পাশে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা সিরিয়ান জনগণকে একটি নতুন, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ সিরিয়া গড়তে সাহায্য করতে চাই।” ক্যালাস আরও বলেন, “গত ১৪ বছর ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সবসময় তাদের পাশে ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।” এই মন্তব্য ইইউ-এর দীর্ঘমেয়াদী প্রতিশ্রুতির উপর আলোকপাত করে, যা কেবল মানবিক সাহায্য নয়, বরং সিরিয়ার রাজনৈতিক পুনর্গঠনেও তাদের আগ্রহের ইঙ্গিত দেয়।
জানা গেছে, গত এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে এই সিদ্ধান্তটি এসেছে, যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ মধ্যপ্রাচ্য সফরে গিয়ে সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। সে সময় সৌদি আরবের রিয়াদে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি সিরিয়াকে নতুন এক সম্ভাবনার সুযোগ দিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছি।’
এর আগে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সিরিয়ার জ্বালানি খাতের উপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই পদক্ষেপটি সিরিয়ার জন্য কিছুটা স্বস্তি নিয়ে এলেও তাদের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের উপর আরোপিত গুরুত্বপূর্ণ নিষেধাজ্ঞাগুলো এখনো বহাল রেখেছে ইইউ। সিরিয়ার পক্ষ থেকে এই অবলম্বিত নিষেধাজ্ঞাগুলো সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহারের জন্য বারবার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তারা যুক্তি দিয়েছে যে এই নিষেধাজ্ঞাগুলো সিরিয়ার অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবে, এই বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
চলতি মাসের শুরুর দিকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে এক সাক্ষাতে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা বলেছিলেন, ‘এগুলো রাখার আর কোনো যৌক্তিকতা নেই।’ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবিও ছিল একই রকম। তারা বলেছিল আসাদ আমলে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করছে এবং মানবিক সহায়তা ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সর্বসম্মতিক্রমে ভোট দিয়ে সব অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন ইইউ’র পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। তবে এই সিদ্ধান্তের জন্য কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছ ইইউ। তারা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। এর মধ্যে রয়েছে: অস্ত্র, রাসায়নিক দ্রব্য, নির্যাতনমূলক কাজে ব্যবহৃত উপকরণ, নজরদারির সফটওয়্যার এবং আসাদের শাসনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।