চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বাংলাদেশে যেকোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, এই নির্বাচন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গৃহীত সংস্কার কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
আজ বুধবার (২৮ মে) জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ লীগের (জেবিপিএফএল) সভাপতি তারো আসো টোকিওর ইম্পেরিয়াল হোটেলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে ড. ইউনূস এই মন্তব্য করেন।
এর আগে, চার দিনের সরকারি সফরে দুপুরে স্থানীয় সময় ২টা ৫ মিনিটে টোকিও পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা। সফরকালে তিনি নিক্কেই ফোরামে অংশগ্রহণ করবেন এবং জাপানি নেতাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
তারো আসো, যিনি বাংলাদেশের একজন দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং জেবিপিএফএলের সভাপতি, ড. ইউনূসকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং একটি মসৃণ গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, অন্তর্বর্তী সরকার তিনটি প্রধান বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে: সংস্কার, খুনিদের বিচার এবং সাধারণ নির্বাচন আয়োজন। তিনি আরও বলেন, ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠন এবং ঋণ পরিশোধে সরকার উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করেছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “পূর্ববর্তী সরকার আমাদের দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। ফলে তরুণ সমাজের মধ্যে বিদ্রোহ সৃষ্টি হয়েছে। সেই তরুণরাই আমাকে এই বিশৃঙ্খলা দূর করার আমন্ত্রণ জানিয়েছে।”
তিনি জাপানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “গত ১০ মাসে জাপান আমাদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দিয়েছে। আমি জাপানকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। এক অর্থে, এটি একটি কৃতজ্ঞতা সফর।” ড. ইউনূস তারো আসোকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান, যাতে তিনি নিজের চোখে পরিবর্তনগুলো দেখতে পারেন।
সাক্ষাতের সময় তারো আসো’র সঙ্গে থাকা কয়েকজন জাপানি সংসদ সদস্য ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (ইপিএ) স্বাক্ষরের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
এসময় তারা বলেন, এটি বাংলাদেশে বৃহত্তর পরিসরে জাপানি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। বাংলাদেশ আগামী আগস্টের মধ্যে আলোচনার কাজ শেষ করে সেপ্টেম্বরে ইপিএ চুক্তি স্বাক্ষরের প্রত্যাশা করছে। এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে, জাপান হবে বাংলাদেশে ইপিএ স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশ।
প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিস্থিতি সম্পর্কে জাপানি সংসদ সদস্যদের অবহিত করেন এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এজেন্ডা বাস্তবায়নে তাদের সহায়তা কামনা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট অন্যান্য শরণার্থী সংকটের থেকে ভিন্ন, কারণ তারা অন্য কোনো দেশে যাওয়ার জন্য অনুনয় করছেন না, বরং নিজ দেশে ফেরার দাবি করছেন।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।