বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ সংক্রান্ত এক আবেদনের নিষ্পত্তি করে এই নির্দেশ দেন। শুনানিতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে আদালতে বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। শুনানি শেষে বিচারপতিরা বলেন, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের।
এর আগে, বুধবার (২৮ মে) আদালত নির্বাচন কমিশনকে ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে গেজেট প্রকাশের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলে। একইসঙ্গে হাইকোর্টে দায়ের করা এক রিট আবেদনের শুনানির ধার্য্য তারিখ নির্ধারণ করে দেয়, যেখানে ইশরাকের শপথ গ্রহণ রোধে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল। আদালতে ইশরাক হোসেনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেন।
আইনি প্রক্রিয়ার পটভূমি
গত ১৪ মে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দা মো. মামুনুর রশিদের পক্ষে আইনজীবী কাজী আকবর আলী হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। তাতে ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ না দেওয়ার পাশাপাশি তাকে মেয়র ঘোষণা করা নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের বিচারকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
পরে ২৬ মে হাইকোর্ট রিটটি খারিজ করে দেন। এরপর সেই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের অনুমতি চেয়ে লিভ টু আপিল করা হয়, যা বৃহস্পতিবার নিষ্পত্তি হয়।
গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের বিক্ষোভের ইস্যু সংযুক্ত
এদিকে একই দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। তারা অভিযোগ করেছেন, শাহবাগে বিরোধী ছাত্র ঐক্যের কর্মসূচি চলাকালে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের সদস্যদের উপর একাধিকবার বাধা দেওয়া হয় এবং বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন নির্বিকার থাকে। এই ঘটনার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে বিকেল সাড়ে ৫টায় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
ছাত্রনেতারা বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হচ্ছে এবং বিরুদ্ধমত দমন নীতিকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রী ও ছাত্র যুব আন্দোলনের নেতারা এসময় দাবি জানান—শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং সকল হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
একই প্রেক্ষাপটে দুই ধারা: রাজনীতি ও প্রতিরোধ
একদিকে বিএনপি-ঘনিষ্ঠ একজন নেতার আইনগত লড়াই, অন্যদিকে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের প্রতিবাদ—উভয় ঘটনাই দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিরোধী মতের অবস্থান এবং তার প্রতিক্রিয়াশীল পরিণতির একটি প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে। আদালতের নির্দেশের পর এখন সবার নজর নির্বাচন কমিশনের দিকে—তারা কী সিদ্ধান্ত নেবে, সেটিই নির্ধারণ করবে ইশরাক হোসেনের পরবর্তী রাজনৈতিক পথচলার দিক।