ঢাবি শিক্ষার্থীদের সন্ধ্যা ৭টার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ নিরুৎসাহিত

New-Project-30-5.jpg
২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সন্ধ্যা ৭টার পর শিক্ষার্থীদের প্রবেশ নিরুৎসাহিত করতে সচেতনতামূলক প্রচারণা শুরু করবে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ ছাড়া, উদ্যানের নিরাপত্তা বাড়াতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, নিরাপত্তা প্রহরী মোতায়েন, এবং রাত ৮টার পর উদ্যানের গেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই ব্যবস্থাগুলো গত বৃহস্পতিবার (২৯ মে, ২০২৫) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এক সভায় চূড়ান্ত হয়।

সভায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে গঠিত নিরাপত্তা উপ-কমিটির আহ্বায়ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ সভাপতিত্ব করেন। উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (রাজনৈতিক) ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, ডিএমপি’র রমনা বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদ আলম, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. বজলুর রহমান, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি’র প্রতিনিধি ফেরদৌস আহাম্মদ, এবং শাহবাগ থানার ওসি মো. খালিদ মনসুর।

সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে:

বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সকল প্রবেশপথ রাত ৮টার পর বন্ধ রাখা।

কালি মন্দিরে প্রবেশের জন্য মন্দিরের নিজস্ব বিকল্প গেটের ব্যবস্থা করা।

পুরো উদ্যানকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা এবং পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা।

নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উদ্যানের ৭টি প্রবেশপথে তিন শিফটে মোট ৪২ জন সশস্ত্র নিরাপত্তা প্রহরী মোতায়েন করা।

সিসিটিভি স্থাপনের আগে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা।

উদ্যানের ভেতরে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন।

শিক্ষার্থীদের সন্ধ্যা ৭টার পর উদ্যানে না যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রচারণা।

গত ১৩ মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিক্ষার্থী সাম্য হত্যার ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তা ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় প্রশাসন তৎপর হয়ে উঠেছে। এই ঘটনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও উদ্বেগ সৃষ্টি করে। ফলে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা বাড়াতে দফায় দফায় বৈঠক করেছে। ইতোমধ্যে টিএসসি-সংলগ্ন উদ্যানের একটি গেট পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মতে, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রহরী মোতায়েন এবং স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের মাধ্যমে উদ্যানে অপরাধ কমানো সম্ভব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহবুব হাসান বলেন, “সোহরাওয়ার্দী উদ্যান রাজধানীর অপরাধের অন্যতম কেন্দ্র। সন্ধ্যার পর এখানে মাদকের আসর ও অসামাজিক কার্যক্রম নিয়মিত ঘটে। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ছে। আমরা আশা করি, প্রশাসন এই ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।”

সাম্য হত্যার ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তার দাবিতে প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছে। উদ্যানে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন অনেকে। তবে, শিক্ষার্থীরা মনে করেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থার পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত ঝুঁকি থেকে যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পাশে অবস্থিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান শিক্ষার্থীদের জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান। এটি শুধুমাত্র বিনোদনের জায়গা নয়, বরং অনেকের জন্য পড়াশোনা ও সামাজিক মেলামেশার কেন্দ্র। কিন্তু সন্ধ্যার পর উদ্যানে অপরাধমূলক কার্যক্রম বৃদ্ধির কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বিশেষ করে, মাদক ব্যবসা ও অসামাজিক কার্যক্রমের কারণে এই এলাকাটি ক্রমশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

নিরাপত্তা উপ-কমিটির আহ্বায়ক সাইফুদ্দীন আহমদ বলেন, “শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিরাপত্তা বাড়াতে আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছি। সিসিটিভি, নিরাপত্তা প্রহরী, এবং পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের মাধ্যমে আমরা এই এলাকাকে নিরাপদ করতে চাই।”

স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ডিএমপি’র উপ পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদ আলম জানান, “আমরা উদ্যানে নিয়মিত টহল জোরদার করেছি। স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের পরিকল্পনা চলছে, যা অপরাধ কমাতে সহায়ক হবে।”

শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হলেও, অনেকে মনে করেন যে বাস্তবায়নের গতি বাড়ানো দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী ফারহানা আক্তার বলেন, “নিরাপত্তা বাড়ানোর উদ্যোগ ভালো, কিন্তু এটি দ্রুত কার্যকর করা না হলে আমাদের ভয় কাটবে না।”

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিরাপত্তা বাড়ানোর এই পদক্ষেপগুলো সফল হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, এই ব্যবস্থাগুলোর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং ক্রমাগত মনিটরিংয়ের ওপর নির্ভর করবে এর সাফল্য। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের এই সমন্বিত প্রচেষ্টা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস পরিবেশ নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

 

Leave a Reply

scroll to top