জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইশিবা শিগেরু শুক্রবার বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জাতি গঠন, সংস্কার কর্মসূচি এবং শান্তিপূর্ণ উত্তরণের প্রচেষ্টায় পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
আজ সকালে টোকিওতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ আশ্বাস দেন তিনি। বৈঠকের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের স্মরণে উভয় নেতা কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি, তারা একটি মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক (FOIP) অঞ্চল গঠনে পারস্পরিক দৃষ্টিভঙ্গি ভাগাভাগি করেন।
আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় উভয় নেতা জাতিসংঘ সনদের নীতিমালা অনুসরণ করে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহযোগিতা জোরদারের অঙ্গীকার করেন। গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ভিত্তিতে বহুপাক্ষিকতাকে সমর্থনের কথাও তারা পুনর্ব্যক্ত করেন।
বৈঠক শেষে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, উভয় পক্ষ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে খোলামেলা ও গভীর আলোচনা করেছেন।
অধ্যাপক ইউনূস মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন উদ্যোগ (MIDIP) এবং বঙ্গোপসাগরীয় শিল্প বেল্ট (BIG-B) প্রকল্পে জাপানের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। এ প্রসঙ্গে উন্নয়ন নীতি ঋণ এবং জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী রুটে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইনের জন্য ঋণচুক্তিকে উভয় পক্ষ স্বাগত জানায়।
বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ সহজ করতে বিডাতে ওয়ান-স্টপ সার্ভিস (OSS), প্রিপেইড গ্যাস মিটার, ব্যাটারি চালিত সাইকেল কারখানা, তথ্য সুরক্ষা পাইলট প্রকল্প, এবং বিএসইজেডে ভূমি চুক্তিসহ বেশ কয়েকটি সমঝোতা ও সহযোগিতা স্মারক (MoU ও MoC) স্বাক্ষরিত হয়।
উভয় দেশ পারস্পরিক সুবিধার ভিত্তিতে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (EPA) দ্রুত সম্পন্নের ওপর গুরুত্বারোপ করে দ্রুত আলোচনার নির্দেশ দেন।
নিরাপত্তা সহযোগিতার অংশ হিসেবে, জাপানের অফিসিয়াল সিকিউরিটি অ্যাসিস্ট্যান্স (OSA) কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য পাঁচটি টহল নৌকা সরবরাহসহ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানোর অঙ্গীকার করা হয়। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়ে নীতিগত সম্মতিতে উভয় দেশ সন্তোষ প্রকাশ করে।
মানবসম্পদ উন্নয়ন, বৃত্তি কর্মসূচি, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে, জাপান বাংলাদেশের মানবিক সহায়তা ও অস্থায়ী আশ্রয় প্রদানের প্রশংসা করে। উভয় দেশ বাস্তুচ্যুতদের মিয়ানমারে নিরাপদ, স্বেচ্ছাসেবী এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনই সংকটের স্থায়ী সমাধান বলে মত প্রকাশ করে। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের আন্তরিক সংলাপ প্রয়োজন বলেও তারা উল্লেখ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস জাপানি প্রধানমন্ত্রীর উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তাকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজি মুখ্য সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদ ও প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
সূত্র: বাসস