ভারতের মণিপুর রাজ্য আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। শনিবার (৭ জুন) বিকেল থেকেই নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে, যার ফলে রাজধানী ইম্ফলের পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠেছে এবং বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মণিপুরের বেশ কয়েকটি জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং বিষ্ণুপুর জেলায় কারফিউ জারি করা হয়েছে।
জানা গেছে, ইম্ফল পূর্ব, ইম্ফল পশ্চিম, থৌবল এবং কাকচিঙের মতো জেলাগুলোতে পাঁচ বা তার বেশি লোকের জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মণিপুর পুলিশ-প্রশাসন। মণিপুরের কমিশনার এবং স্বরাষ্ট্রসচিবের জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কিছু ব্যক্তি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জনগণের আবেগকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং হিংসাত্মক বক্তব্য ও ভিডিও ছড়াতে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করতে পারে, যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, আপাতত আগামী ৫ দিন ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, ঘটনার সূত্রপাত মেইতেই গোষ্ঠী ‘আরামবাই টেংগোল’-এর কমান্ডারসহ পাঁচজনের গ্রেফতারের খবর প্রকাশ্যে আসার পর। মেইতেই গোষ্ঠীর বেশ কয়েকজন পশ্চিম ইম্ফলের কোয়াকেইথেল পুলিশ পোস্টে হামলা চালায়। এরপর তারা গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে।
অভিযোগ উঠেছে যে, বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালিয়েছে। দুই পক্ষের ধস্তাধস্তিতে দুই সাংবাদিকসহ তিনজন আহত হয়েছেন। এরপরই রাজ্যের বিভিন্ন দিকে অশান্তির আগুন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। কিছু বিক্ষোভকারীকে মাথায় পেট্রোল ঢেলে আত্মহত্যার হুমকি দিতেও দেখা যায়, যা পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তোলে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৩ মে থেকে মণিপুরে মেইতেই এবং কুকি জনজাতির সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বারবার সংঘাতের ঘটনা ঘটে আসছে। গত দু’বছরে এই সহিংসতায় ২৬০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এই আবহে বীরেন সিং মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন এবং বর্তমানে মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি রয়েছে।
ক্ষমতাসীন বিজেপি নতুন করে সেখানে সরকার গঠনের উদ্যোগী হলেও, এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এর মধ্যেই নতুন করে মণিপুর অশান্ত হয়ে উঠেছে, যা রাজ্যের ভঙ্গুর শান্তি পরিস্থিতির উপর আবারও প্রশ্ন চিহ্ন এঁকে দিল।