পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে রাজধানী ছাড়ছে লাখো ঘরমুখো মানুষ। আজ শুক্রবার (৬ জুন) ভোর থেকেই সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী বাস টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। তবে, ঢাকা-মাওয়া রুটে চলাচলকারী বাসগুলোতে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা, যা তাদের ঈদযাত্রার আনন্দকে ম্লান করছে।
বরিশাল, খুলনা, বেনাপোল, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও রাজবাড়ীসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মানুষ এই রুটে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরছেন। বাস কাউন্টার ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক দিনের তুলনায় ঈদের আগের দিন অর্থাৎ আজ বাস টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের চাপ অনেক বেশি।
যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, টিকিট সংকট না থাকা সত্ত্বেও প্রায় প্রতিটি গাড়িতেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। দাঁড়িয়ে গেলেও ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুরের জন্য ২০০ টাকা এবং সাতক্ষীরা, যশোর, বরিশাল ও খুলনার জন্য ৭০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও জনপথের মোড়ে আন্তঃজেলা বাস কাউন্টারগুলোতে টিকিট নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে দর কষাকষি করতে দেখা গেছে। অনেক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, দু-একটি পরিবহন ছাড়া কোথাও টিকিটের সংকট না থাকলেও কিছু পরিবহন মূল ভাড়ার চেয়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি নিচ্ছে। এমনকি বেশিরভাগ পরিবহন দ্বিগুণেরও বেশি দামে টিকিট বিক্রি করছে। একসঙ্গে তিন-চারজন যাত্রী গেলে দরদাম করে কিছু টাকা ছাড় পাওয়া যাচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তারা।
বিভিন্ন রুটে অতিরিক্ত ভাড়ার চিত্র
বরিশাল রুট: মিজান পরিবহনে পটুয়াখালী যেতে অন্য সময় ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হলেও, ঈদ উপলক্ষে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। বরিশালের সাকুরা পরিবহন যাত্রীদের কাছ থেকে ১২০০ টাকা ভাড়া ডাকছে।
মাওয়া রোড: পাঁচ্চর, ভাঙ্গা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও শরীয়তপুরে মাথাপিছু ৫০০ টাকা ভাড়া নিচ্ছে, যেখানে শরীয়তপুর ও ভাঙ্গা পর্যন্তও জনপ্রতি ৫০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
ফরিদপুর: সাউদিয়া পরিবহনে ঈদ মৌসুমে ভাড়া এখন ৮০০ টাকা, যা অন্য সময়ে ৫০০ টাকা ছিল। ইমাম হোসেন নামে এক যাত্রী জানান, তার গন্তব্য ফরিদপুর হলেও সাতক্ষীরা পর্যন্ত যাওয়া গাড়িতেও একই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জের যাত্রী রাফিউল হাসান জানান, তার এলাকায় বাসে ঈদ ছাড়া ভাড়া সাড়ে ৩০০ বা ৪০০ টাকা হলেও এখন ৭৫০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “পরিবার নিয়ে ঈদে বাড়ি আসা-যাওয়াতেই কয়েক হাজার টাকা শেষ।”
নোয়াখালী ও নড়াইল: নোয়াখালীর চাটখিলগামী হিমালয় ও আল বারাকা পরিবহনে ১০০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। অন্য সময় ৫০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হলেও এখন ৬০০ টাকা করা হয়েছে।
নড়াইলগামী যাত্রী আব্দুস সালাম জানান, যাত্রাবাড়ী-নড়াইল রুটে স্বাভাবিক সময়ে ৪০০-৪৫০ টাকা ভাড়া নেওয়া হলেও এখন ৮০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। এমনকি দাঁড়িয়ে গেলেও জনপ্রতি ৫০০ টাকা দিতে হচ্ছে। যাত্রাবাড়ী-যশোর রুটে ৫০০-৫৫০ টাকা ভাড়া হলেও এখন জনপ্রতি ৮০০-৯০০ টাকা এবং দাঁড়িয়ে গেলেও ৭০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সায়েদাবাদে ইকোনো কাউন্টারের ম্যানেজার বলেন, “ঈদ উপলক্ষে মালিকের নির্দেশনায় ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ঈদের তিনদিন পর আবারও আগের মতোই ভাড়া নেওয়া হবে।”
তবে কয়েকটি বাস কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতারা স্বীকার করেছেন যে, ঈদে ২০০-১০০ টাকা ভাড়া বেশি নেওয়া “স্বাভাবিক”। তাদের দাবি, রাজধানী থেকে যে বাসগুলো যাচ্ছে, সেগুলো আবার খালি ফিরে আসছে, তাই ক্ষতিপূরণ বাবদ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে তারা দ্বিগুণ বা তার বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
অন্যদিকে, সেন্টমার্টিন পরিবহনের টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিকে ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি ‘কথা বলার সময় নেই’ বলে জানিয়ে দেন। এই পরিস্থিতিতে ঈদযাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন এবং সরকারের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।