শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চার্জ দাখিল রোববার, সরাসরি সম্প্রচার

New-Project-7-9.jpg
২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ নিজস্ব প্রতিবেদক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র (চার্জ) দাখিল হচ্ছে আগামীকাল রোববার। বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) মাধ্যমে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে এ কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচারের সম্ভাবনা রয়েছে।

শনিবার (৩১ মে) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। তিনি জানান, “আদালতের শুনানিতে যখন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেওয়া হবে, তখন বিটিভির মাধ্যমে তা সরাসরি সম্প্রচার করার জন্য আবেদন করা হবে। ট্রাইব্যুনালের অনুমতি মিললে সেটিই হবে দেশের ইতিহাসে একটি নতুন মাইলফলক।”

এর আগে ১২ মে, জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। সেই তদন্তে শেখ হাসিনাকে মূল মাস্টারমাইন্ড ও সুপিরিয়র কমান্ডার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, তদন্ত প্রতিবেদনে মোট তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে শেখ হাসিনা প্রধান আসামি। তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে পাঁচটি অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে “রাজাকারের বাচ্চা”, “রাজাকারের নাতিপুতি” ইত্যাদি মন্তব্য করে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় বাহিনীকে উসকে দেন। এতে শুরু হয় দমন-পীড়নের সূচনা।  সরাসরি রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে অস্ত্র, হেলিকপ্টার, ড্রোন ও এপিসিসহ মরণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয় নিরস্ত্র নাগরিকদের বিরুদ্ধে, যা শেখ হাসিনার জব্দকৃত টেলিফোন কথোপকথনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।

নির্দিষ্ট স্থান ও ঘটনার ভিত্তিতে চালানো গণহত্যা, নারী নির্যাতন, চিকিৎসা ও সেবাপ্রাপ্তি প্রতিরোধসহ ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধের নৃশংস বিবরণ। অভিযোগ অনুযায়ী এসব ঘটনাও শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় সংঘটিত হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই-আগস্টের ‘জুলাই বিপ্লব’-কালীন দমনপীড়নে প্রায় ১,৫০০ জন নিহত হন এবং ২৫ হাজারের বেশি মানুষ আহত হন। নারীদের ওপর চালানো হয় পদ্ধতিগত নির্যাতন, আহতদের হাসপাতালে নিতে বাধা দেওয়া হয় এবং মৃত্যুদেহ একত্র করে পুড়িয়ে ফেলার মতো ঘটনাও ঘটেছে।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “শেখ হাসিনা নিজে হাসপাতালে গিয়ে নির্দেশ দিয়েছিলেন, আহতদের চিকিৎসা না দিতে। এমনকি তিনি বলেছিলেন, ‘রোগীরা যাতে যন্ত্রণা সহ্য না করতে পেরে হাসপাতালে না পালাতে পারে’ সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। এমন ভয়াবহতা এ দেশের ইতিহাসে বিরল।”

সরকারি স্থাপনায় পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগ এবং আন্দোলনকারীদের ওপর দায় চাপানোর ষড়যন্ত্রের কথাও তদন্তে উঠে এসেছে। শেখ হাসিনা নাকি নিজস্ব দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে এসব আগুন লাগানোর নির্দেশ দেন। উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণভাবে আন্দোলনকারীদের “সন্ত্রাসী” প্রমাণ করা। 0.

রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে চার্জ দাখিলের পর বিচারকরা অভিযোগ আমলে নেবেন কিনা তা নির্ধারণ করবেন। এরপর প্রাথমিক শুনানি শুরু হবে। বিটিভির মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারের বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল অনুমতি দিলে আদালত কক্ষে থাকা সাংবাদিক ও জনসাধারণ নতুন এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবেন।

অভিযোগের ভেতরের বিবরণ, প্রমাণের ধরন এবং রাজনৈতিক অভিঘাত বিবেচনায় এই মামলাটি ইতোমধ্যে দেশে-বিদেশে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন মামলার চার্জ গঠন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম।

Leave a Reply

scroll to top