দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ, প্রসবের অসহনীয় যন্ত্রণা, নিজে না খেয়ে সন্তানের মুখে অন্ন তুলে দেওয়া, রাত জেগে আদরে-যত্নে বড় করা—একজন মায়ের ত্যাগের গল্প শেষ হয় না। কিন্তু সেই মা, যিনি জীবনের সবটুকু উৎসর্গ করেছেন সন্তানদের জন্য, আজ কেন মুরগীর খোপে কাটাচ্ছেন জীবনের শেষ দিনগুলো? কেন তাঁর কান্না শোনার কেউ নেই?
পটুয়াখালী সদর উপজেলার লাউকাঠী ইউনিয়নের দক্ষিণ লাউকাঠী গ্রামে বাস করেন নুরজাহান বেগম, একজন মা যিনি জীবনভর ভিক্ষা করে সন্তানদের মানুষ করেছেন। কিন্তু আজ তাঁর আশ্রয় একটি ভাঙাচোরা মুরগীর খোপ। বৃষ্টির পানিতে স্যাঁতসেঁতে, অন্ধকার এই খোপে নেই কোনো কাঁথা, বালিশ, বা হাওয়ার আনাগোনা। সেখানে কোনোমতে বসে থাকেন এই অসহায় মা, ক্ষুধার জ্বালায় কখনো চিৎকার করে কাঁদছেন, আবার কখনো ক্ষুধার তাড়নায় নিজের হাত কামড়ে খাওয়ার চেষ্টা করছেন এই বৃদ্ধা মা। কিন্তু এখানে তাঁর আর্তনাদ শোনার কেউ নেই।
স্থানীয়রা জানান, ঝড় হোক বা বৃষ্টি, প্রতিদিন সকালে নুরজাহানকে মুরগীর খোপে রেখে সন্তান ও পুত্রবধূরা কাজে চলে যান। তাঁদের বাসগৃহ তালাবদ্ধ করে রাখা হয়, আর নিরুপায় মা নড়বড়ে শরীর নিয়ে খাবারের আশায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ান। সম্প্রতি হোঁচট খেয়ে মাথা ফেটে যাওয়া, হাত ভেঙে যাওয়া—এমন নানা যন্ত্রণায় ছটফট করছেন তিনি। এক ফোঁটা পানির জন্য তাঁর আকুতি, কিন্তু তালাবদ্ধ ঘরে তাঁর কান্না শোনার কেউ নেই। সন্তানরা সকালে বেরিয়ে সন্ধ্যায় ফেরেন, মাকে একা ফেলে।
সম্প্রতি বন্যার কারণে জোয়ারের পানিতে ডুবে আছে নুরজাহানের খোপের চারপাশ। এই পানির মাঝে তাঁর মনে জেগেছে অজানা আতঙ্ক। দিনরাত কাটছে ভয় আর কষ্টের মধ্যে।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে পটুয়াখালী সদর উপজেলার লাউকাঠী ইউনিয়নের দক্ষিণ লাউকাঠী গ্রামে। নুরজাহানের দুই সন্তানের সন্ধানে ২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ-এর প্রতিনিধি গেলেও তাদের কোথাও পাওয়া যায়নি।
মা—যিনি জান্নাতের টিকিট, যিনি সন্তানের জন্য জীবন দিয়েছেন—তাঁর কি এই পরিণতি প্রাপ্য? তাঁর ত্যাগ, ভালোবাসা, আদরের বিনিময়ে কি একটু যত্ন, একটু সান্ত্বনা পাওয়ার অধিকার তাঁর নেই? আমাদের মানবিকতা, আমাদের দায়িত্ব কোথায় হারিয়ে গেল? শিক্ষার আগে প্রয়োজন মানুষ হওয়া। মায়ের প্রতি ভালোবাসা, যত্ন, আর সম্মান দিয়ে আমরা তবেই পৃথিবীকে আরও সুন্দর করতে পারি।