ব্রাজিলের ফুটবলে বড়সড় ধাক্কা!

New-Project-15-6.jpg
২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

ব্রাজিলীয় ফুটবল আবারও অস্থিরতার কেন্দ্রবিন্দুতে। দেশের সর্বোচ্চ ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা কনফেডারাসাও ব্রাজিলেইরা দে ফুটেবল (সিবিএফ)-এর সভাপতি এদনালদো রদ্রিগেজ ও পুরো কার্যনির্বাহী বোর্ডকে আদালতের রায়ে অপসারণ করা হয়েছে। অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে এক চুক্তি জালিয়াতির ঘটনা, যা শুধুমাত্র রদ্রিগেজের নয়— গোটা ক্রীড়া প্রশাসনের নৈতিকতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে।

ঘটনার পেছনের কারণ: চুক্তি জালিয়াতি ও মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা

রিও ডি জেনেইরোর একটি আদালতের রায়ে বলা হয়, রদ্রিগেজ নিজের মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করার উদ্দেশ্যে একটি চুক্তিপত্রে জালিয়াতির আশ্রয় নেন। সেই চুক্তিতে সিবিএফের সাবেক সভাপতি আন্তোনিও কার্লোস নুনেস দে লিমার স্বাক্ষর ছিল বলে দাবি করা হয়। কিন্তু আদালতের তদন্তে দেখা গেছে, নুনেস ২০১৮ সাল থেকেই মস্তিষ্কের ক্যানসারে আক্রান্ত এবং মানসিকভাবে সুস্থ না থাকায় তিনি কোনো বৈধ চুক্তিতে স্বাক্ষর করার অবস্থায় ছিলেন না। বিচারক গ্যাব্রিয়েল দে অলিভেইরা জেফিরো রায়ে বলেন, “চুক্তিটি একটি অসাংবিধানিক ও বাতিলযোগ্য দলিল। এমন অবৈধ চুক্তির ভিত্তিতে পরিচালিত প্রশাসনের কোনো বৈধতা থাকতে পারে না।”

পূর্বাপর প্রেক্ষাপট: আদালতের সঙ্গে সিবিএফের টানাপোড়েন

উল্লেখযোগ্যভাবে, এটি রদ্রিগেজের বিরুদ্ধে দ্বিতীয়বারের মতো এমন রায়। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে একবার আদালতের নির্দেশে তাকে অপসারণ করা হয়েছিল। তখনও পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে উঠেছিল যে, ফিফার হস্তক্ষেপের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। যদিও পরে ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট তাকে পুনর্বহাল করে দেয়। চলতি বছরের মার্চে আবারও সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন রদ্রিগেজ। এরপরেই তিনি কার্লো আনচেলত্তিকে ব্রাজিল জাতীয় দলের কোচ হিসেবে নিয়োগ দেন— যা ছিল তার বড় একটি সিদ্ধান্ত। কিন্তু এই নিয়োগের ঠিক তিন দিন পরেই আদালতের রায়ে তিনি আবারও ক্ষমতাচ্যুত হন।

 নতুন নেতৃত্ব ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

রদ্রিগেজের অনুপস্থিতিতে সিবিএফের সহ-সভাপতি ফার্নান্দো সারনি আপাতত সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছেন। আদালতের নির্দেশনায় সারনিকে যত দ্রুত সম্ভব নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। তবে এখানেই শেষ নয়— প্রশ্ন এখন সিবিএফের ভবিষ্যত কাঠামো ও বিশ্বাসযোগ্যতা ঘিরে। একের পর এক আইনি বিতর্ক, নেতৃত্ব সংকট ও প্রশাসনিক জটিলতা ব্রাজিলের ফুটবলকে কেবল মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও দুর্বল করে তুলছে।

বিশ্লেষণ: প্রশাসনিক শূন্যতায় বিপন্ন ব্রাজিলীয় ফুটবল ভবিষ্যৎ

বিশ্ব ফুটবলে ব্রাজিলের অবস্থান ঐতিহাসিকভাবে অগ্রগণ্য হলেও, তাদের প্রশাসনিক কাঠামো গত কয়েক বছর ধরে নানা বিতর্ক ও দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত। এর ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। সিবিএফের নেতৃত্বের এই অনিশ্চয়তা ব্রাজিল জাতীয় দলের প্রস্তুতি ও ভবিষ্যৎ কৌশলেও প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে ২০২৬ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে দলকে স্থায়ী নেতৃত্বের অধীনে প্রস্তুত করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

সমাপনী কথা: গ্রহণযোগ্য নেতৃত্বই একমাত্র পথ

বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্রাজিলীয় ফুটবলের জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করা। প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে না পারলে মাঠের পারফরম্যান্স যতই শক্তিশালী হোক না কেন, ফুটবল বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি ব্রাজিল তার মর্যাদা হারাতে পারে। সিবিএফ এখনও আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে ফুটবলপ্রেমীদের প্রত্যাশা— শিগগিরই এ সংকটের স্থায়ী সমাধান আসবে, এবং ব্রাজিলীয় ফুটবল আবারও সুনির্দিষ্ট পথে ফিরবে।

Leave a Reply

scroll to top