বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) বরিশাল জেলা কার্যলয়ের সহকারী প্রকৌশলী এ.কে.এম কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে ঠিকাদারদের হয়রানি, আত্মীয় স্বজনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি ব্যবসা, নিয়োগ, তদবির, বদলি বাণিজ্য এবং বিগত আওয়ামীলীগের বিভিন্ন নেতার নাম ভাঙিয়ে তার বিরুদ্ধে শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও ঠিকাদারদের হয়রানির অভিযোগ তদন্ত করছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিচ্ছে বলে জানা গেছে ।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, কামরুজ্জামান ফরিদপুর ও মাদারীপুর সহকারী প্রকৌশলী থাকাকালে ১২/১৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে কয়েকশত কোটি টাকার কাজ দেখিয়ে শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আত্মীয় স্বজনদের ঠিকাদার সাজিয়ে স্পট কোটেশনের মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। সিডিউল বহির্ভূত নিম্নমানের কাজের সুযোগ দিয়ে ৬০% টাকার ভাগ নিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সাবেক এক আত্মীয়র পরিচয় দিয়ে তিনি নিয়োগ ও তদবির বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভুক্তভোগী জানান, মেসার্স রাজা বাদশা, মেসার্স বিএম কনস্ট্রাকশন, মেসার্স সামস এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স সোহেল এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স আলীম কনস্ট্রাকশন, মেসার্স মোহাম্মদ কনস্ট্রাকশন, মেসার্স উজ্জ্বল ট্রেডার্স নামের সাতটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তার নিকট আত্মীয়দের। মাদারীপুরে সহকারী প্রকৌশলী থাকাকালে নিজে ঠিকাদার সেজে শুধু রঙের কাজ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
ওই ভুক্তভোগী আরো জানান, দুর্নীতির টাকায় উত্তরা ও পূর্বাচলে স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়ী ও আত্মীয়দের নামে প্লট ও ফ্লাট কিনেছেন কামরুজ্জামান। দুর্নীতির টাকা বৈধ করতে দেশের বাড়ি ফরিদপুরে ডেইরী ফার্ম, পোল্ট্রি ফার্ম’র ব্যবসা করছেন। নিজ এলাকা ও শ্বশুরবাড়িতে কয়েক বিঘা জমি কিনেছেন অল্প সময়ের মধ্যে। ফরিদপুর শহর ও তার আশেপাশে রয়েছে তার স্ত্রী ও শশুরবাড়ির লোকজনের নামে কয়েকটি প্লট ও বাড়ি।
মাদারীপুরের এক ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেন, মাদারীপুর নতুন বিসিক এরিয়ার বিভিন্ন কাজে রিভাইজ করিয়ে ঠিকাদারদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কামরুজ্জামান। অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল হিসেবে সাবেক নৌ মন্ত্রী শাজাহান খান, তার ছেলে আসিব খান, মন্ত্রীর ভাই যাচ্চু খানের বন্ধু , সাবেক বিসিক প্রধান প্রকৌশলী ও সেনাবাহিনীর কয়েকজন মেজর জেনারেলের নাম ভাঙিয়েছেন তিনি।
অভিযোগে জানা গেছে, মাদারীপুর বিসিক নগর তৈরির সময় শাজাহান খানের ভাইয়ের সার্বির ইন্টারন্যাশনাল এর সাথে যোগসাজে আড়িয়াল খা নদী থেকে বালু তুলে ভরাট, ভিম, কলাম, ছাদের ঢালাই কম ও রডের পরিমাণও কম দেয়া হয়েছে। কম কাজ করে ঠিকাদারদের সাথে সরকারি অর্থ ভাগাভাগি করেছেন কামরুজ্জামান। এছাড়া শাজাহান খানের চাচাতো ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শফিক খানের সাথে তার ছিল রাতের পাটনার। শফিক খান বিভিন্ন জনকে হাসির ছলে বলতেন তারা দুইজন গ্লাস ও নারীর পার্টনার।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী প্রকৌশলী এ.কে.এম কামরুজ্জামান পুরোটা অস্বীকার করেন এবং তার স্ত্রীকে ফোন ধরিয়ে দেন। তার স্ত্রী প্রথমে সব অস্বীকার করলেও অভিযোগের পরবর্তীতে কয়েকটি বিষয় স্বীকার করেন।