মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বঙ্গোপসাগর উপকূলে দুটি পৃথক দুটি নৌকাডুবির ঘটনায় অন্তত ৪২৭ জন রোহিঙ্গা নিখোঁজ হয়েছেন। আজ শনিবার (২৪ মে) এক বিবৃতিতে এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। মিয়ানমারের সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি এবং রোহিঙ্গাদের উপর চলমান নিপীড়নই এই চরম ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রযাত্রা বেছে নিতে বাধ্য করছে বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
ইউএনএইচসিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রথম দুর্ঘটনাটি ঘটে গত ৯ মে। সেদিন মিয়ানমারের আরাকান উপকূল থেকে ২৬৭ জন রোহিঙ্গা যাত্রী নিয়ে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা যাত্রা করেছিল। কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর নৌকাটি ডুবে যায়। এই ঘটনায় মাত্র ৬৬ জন প্রাণে বাঁচতে সক্ষম হলেও বাকিদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
পরের দিন, ১০ মে, একই উপকূল থেকে ২৪৭ জন যাত্রী নিয়ে আরও একটি ইঞ্জিনচালিত কাঠের নৌকা ডুবে যায়। এই দুর্ঘটনায় মাত্র ২১ জন জীবন নিয়ে ফিরে আসতে পেরেছেন, বাকিরা এখনও নিখোঁজ। সব মিলিয়ে, দুই দুর্ঘটনায় মোট ৫১৪ জন রোহিঙ্গার মধ্যে মাত্র ৮৭ জন বেঁচে ফিরেছেন, যা একটি ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়।
ইউএনএইচসিআর-এর এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের ব্যুরো প্রধান হাই কিউং জুন এক বিবৃতিতে এই ঘটনায় গভীর দুঃখ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, “মিয়ানমারের ভয়াবহ সংঘাত পরিস্থিতি এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর দশকের পর দশক ধরে চলতে থাকা নির্যাতন-নিপীড়ন এই জনগোষ্ঠীকে এমন চরম ঝুঁকিপূর্ণ পথ বেছে নিতে বাধ্য করছে।” নিখোঁজ হওয়া এই রোহিঙ্গা যাত্রীরা ঠিক কোন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে, উন্নত জীবনের আশায় সাগরপথে পাড়ি জমানো রোহিঙ্গাদের গন্তব্য সাধারণত বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া বা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্য কোনো দেশ হয়ে থাকে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের বেশ কয়েকটি পুলিশ স্টেশন ও সেনা ছাউনিতে আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) নামক সশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর হামলার পর মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ভয়াবহ অভিযান শুরু করে। এই অভিযানের মুখে নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট এবং বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের শিকার হয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে বাধ্য হন।
বর্তমানে বাংলাদেশের কক্সবাজারের টেকনাফ জেলার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে ১৫ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। তবে, কয়েক বছর আগেই বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘকে জানিয়ে দিয়েছে যে রোহিঙ্গাদের আর আশ্রয় দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে, মিয়ানমার উপকূলে ঘটে যাওয়া এই নৌকাডুবির ঘটনাগুলো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ এবং তাদের নিরাপদ আশ্রয়ের প্রশ্নটিকে আরও প্রকট করে তুলেছে।