ড. ইউনূসের পদত্যাগ ঠেকাতে যমুনায় বিএনপি-জামায়াতের বৈঠক আজ

New-Project-17-5.jpg

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস

২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের ইচ্ছার খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই দেশের রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়।

রাজনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগ কেউই চাইছে না। বরং রাজনৈতিক দলগুলোর বেশিরভাগই মনে করছে, তাঁর নেতৃত্বেই অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। তবে তারা প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে একটি স্পষ্ট ও সময়বদ্ধ নির্বাচন রোডম্যাপ চাচ্ছে।

এ প্রেক্ষাপটে আজ শনিবার অধ্যাপক ইউনূসের সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’য় বিএনপিসহ একাধিক রাজনৈতিক দল তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছে। তাদের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে দায়িত্বে থাকার অনুরোধ জানানো হতে পারে বলে জানা গেছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপি, এনসিপি ও জামায়াত নেতাদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়। এতে সবাই একমত হন যে, বর্তমান অনিশ্চয়তা নিরসনে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ ঠেকানো প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে অনুরোধ জানানো হবে।

সন্ধ্যায় হবে বৈঠক

এই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে সাক্ষাতের সময় চাওয়া হয়। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক নির্ধারিত হয়েছে। একই দিন সন্ধ্যা ৬টায় জামায়াতের প্রতিনিধিদলের সঙ্গেও তাঁর সাক্ষাৎ হওয়ার কথা রয়েছে।

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান ইতোমধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে এক বিবৃতিতে অধ্যাপক ইউনূসকে একটি সর্বদলীয় বৈঠক আহ্বানের অনুরোধ জানান। পরদিন শুক্রবার সকালে তিনি যমুনায় গেলেও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি।

প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠকের পর অনির্ধারিত আলোচনায় নিজের পদত্যাগের ভাবনার কথা জানান। সেখানে তিনি সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে প্রতিবন্ধকতা, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের অভাব, রাষ্ট্রীয় কাজকর্মে বিভিন্ন পক্ষের অসহযোগিতা এবং চলমান আন্দোলন-সংকট নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন।

এ ইঙ্গিত জানাজানি হওয়ার পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে আলোচনার ঝড় উঠে। বিষয়টি আরও জটিলতা তৈরি করে, যখন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বুধবার ঢাকা সেনানিবাসে ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’-এ বক্তৃতায় ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অধ্যাপক ইউনূস সম্প্রতি বেশ কয়েকটি কারণে বিরক্ত। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়া, সেনাপ্রধানের বক্তব্য, নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সক্রিয়তা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া, ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে বসানোর দাবিতে যমুনা পর্যন্ত আন্দোলন, এবং রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ অনৈক্য অন্যতম।

এই অবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি—সংকটের সময় অধ্যাপক ইউনূসের মত একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তিত্বের নেতৃত্ব প্রয়োজন। তাঁকে ঘিরে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে উঠলে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব হতে পারে।

Leave a Reply

scroll to top