আমিনুল ইসলাম বুলবুল, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নবনির্বাচিত সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক এবং দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে একজন কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব। তিনি বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে ইতিহাস গড়েছেন। নিচে তার সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া হলো:
জন্ম ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৮, ঢাকা, ডাকনাম: বুলবুল। পেশা: প্রাক্তন ক্রিকেটার, ক্রিকেট প্রশাসক, এবং কোচ। আমিনুল ইসলাম বুলবুল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রথম অধিনায়কদের একজন ছিলেন। তিনি ১৯৮৮ সালে আইসিসি অ্যাসোসিয়েটস ইয়ুথ ওয়ার্ল্ড কাপে বাংলাদেশের হয়ে খেলেন, যেখানে তিনি ব্রায়ান লারার উইকেট নিয়ে আলোচনায় আসেন।
২০০০ সালের ১০ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট ম্যাচে তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টেস্ট সেঞ্চুরি (১৪৫ রান) করেন। এটি তাকে চার্লস ব্যানারম্যান এবং ডেভ হাউটনের পর তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে নিজের ও দেশের প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব এনে দেয়।
তিনি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে দীর্ঘদিন খেলেছেন এবং অধিনায়কত্ব করেছেন। তার ক্যারিয়ারের শেষ মৌসুমে তিনি বিমান বাংলাদেশের হয়ে খেলেন।
তিনি বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ইংল্যান্ডে মাইনর কাউন্টি ক্রিকেট খেলেন, যেখানে তিনি বেশ কয়েকটি সফল মৌসুম কাটান।
আমিনুল দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) এবং এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলে (এসিসি) উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি এশিয়া জুড়ে ক্রিকেট উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবং কোচদের তত্ত্বাবধান করেছেন।
অস্ট্রেলিয়ায় কোচিং প্রশিক্ষণ শেষ করে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আবাহনী লিমিটেড ক্রিকেট দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় একটি স্থানীয় দলের কোচ ও খেলোয়াড় হিসেবেও কাজ করেছেন।
আজ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) তাকে বিসিবির পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন দেয়। একই দিনে বিসিবির বোর্ড সভায় তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি জানিয়েছেন, তার মূল লক্ষ্য সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে স্থায়ী নেতৃত্ব হস্তান্তর করা।
বিসিবিতে ভূমিকা ও বিতর্ক:
আমিনুলের সভাপতি হওয়ার পেছনে সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদের বিতর্কিত অপসারণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফারুকের বিরুদ্ধে আটজন পরিচালকের অনাস্থা প্রস্তাব এবং এনএসসি’র তার মনোনয়ন বাতিলের পর আমিনুলকে পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
ফারুক আইসিসির কাছে অভিযোগ করেছেন যে তার অপসারণে সরকারি হস্তক্ষেপ ছিল। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, এমন হস্তক্ষেপ প্রমাণিত হলে বিসিবি স্থগিতাদেশের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
আমিনুল ইসলাম বাংলাদেশের ক্রিকেটে পুরোধা হিসেবে বিবেচিত। তবে তিনি বিসিবির কাছ থেকে সবসময় সঠিক স্বীকৃতি পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি জাতীয় দল থেকে অবসর নেননি, বরং নির্বাচকদের নতুন খেলোয়াড়দের সুযোগ দেওয়ার নীতির কারণে দল থেকে বাদ পড়েন এবং অভিমানে ক্রিকেট ছাড়েন। আমিনুল ইসলাম বুলবুলের অভিজ্ঞতা, নিরপেক্ষ ভূমিকা, এবং ক্রিকেট উন্নয়নে তার অবদান তাকে বিসিবির নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। তবে, ফারুক আহমেদের অভিযোগ এবং আইসিসির সম্ভাব্য তদন্তের কারণে তার নেতৃত্বের পথ সহজ হবে না।